Skip to main content

পরমকরুনাময় এবং অসীম দয়ালু চিপাল্লা এবং আমার অবিশ্বাসী পাপী মন


আমার যে ফেসবুক একাউন্ট আছে, একদিন দেখি তার ওয়ালে বিশাল এক পোস্ট শেয়ার দিয়েছে কে বা কাহারা। রোজ এই পোস্ট পার হয়ে মানুষের স্ট্যাটাস দেখতে হয়, এমনকি মানুষের সাথে ভালোভাবে যোগাযোগ করারও উপায় থাকল না। ফ্রেন্ড-লিস্টের সবাই দেখলাম ব্যাপারটা সম্পর্কে উদাসীন, এত বড় বড় পোস্ট, তা নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। এই টাইপ পোস্ট থাকার কারণে মানুষের স্ট্যাটাস, খবর পেতে সমস্যা হচ্ছিল, কোন মূমুর্ষ রোগীর জন্য রক্তের পোস্ট বা বন্ধুবান্ধবের জরুরি খবর দেখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পরেছিল। কিন্তু একটা সময়ে আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, মানুষজন বেশ অভ্যস্ত হয়ে পরেছে, তারা তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পোস্টগুলাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। আরও আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, পোস্টগুলা নিয়ে বাচ্চারা বিভিন্ন কমেন্ট আর এক্টিভিজম করতে শুরু করেছে, এবং এভাবেই পোস্ট এবং পোস্ট-দাতা (ধরি তার নাম চিপ) আমার জগতে ক্রমশ একটা চরিত্রে পরিণত হল।
ঠিক করলাম পোস্টগুলা সরাতে হবে, এভাবে চলতে দেয়া যায় না। তো এসব ভেবে চিন্তে স্বপ্রনোদিত হয়েই শুরু করলাম আলোচনা। ব্লগ ফেসবুকের সিনিয়র, যারা এই পোস্টগুলাকে এই শেয়ার করার জন্য দায়ী এবং লাভবান, তারা স্বাভাবিক ভাবেই এই পোস্ট-দাতার গুণকীর্তনে লিপ্ত হল। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, একটা দল দাড়িয়ে গেল পোস্ট-দাতাকে রক্ষায়। পোস্টের নানাবিধ উপকারিতা বর্ণনা করে তারা পোস্ট-দাতাকে ফেন্ডলিস্টেই রাখার পক্ষে রায় দিল। তারা বলল, "পোস্টের জন্য যোগাযোগে অসুবিধা হচ্ছে এটা তো পোস্ট-দাতার দোষ নয়, এটা ফেসবুকের দোষ এবং মানুষের দোষ! তারা পোস্টগুলাকে জনস্বার্থে ব্যাবহার করতে পারছে না, এগুলাকে কিভাবে জনস্বার্থে ব্যাবহার করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে"।
তাদের যুক্তি দেখে মুগ্ধ হলাম, সেই অসাধারণ যুক্তিটি হচ্ছে, "মাথাব্যথার জন্যে তো মাথা কাটা যাবে না! পোস্টের কারণে সমস্যা হওয়াতেও পোস্ট-দাতাকে সড়ানো যাবে না!"
এই অসাধারণ যুক্তিবোধাক্রান্ত মানুষগুলোর বেশ কিছু সমর্থকও তৈরি হল, তারা জানপ্রান দিয়ে পোস্ট রক্ষায় নেমে পরলেন। বিভিন্ন দল উপদল তৈরি হতে লাগলো, কেউ পোস্টগুলাকে খেলাধুলার কাজে লাগাতে চায়, কেউ চায় ব্যায়ামের জন্য ব্যাবহার করতে। তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল তৈরি শুরু করলো এবং একে অপরের সাথে তর্ক করা শুরু করলো, যে পোস্টগুলাকে আসলে কোন কাজে লাগালে বেশি ভাল হবে। তাদের ভেতরে আবার প্রায় দাঙ্গাও শুরু হবার যোগার, একে অপরকে হুমকি ধামকি দিয়ে চুপ করাতে চেষ্টা করছে, আবার আমার পক্ষে যারা আছে, পোস্টদাতাকে সড়ানোর প্রসঙ্গ আনলেই আমাদের বিরুদ্ধে এক হয়ে যাচ্ছে। কি বিশ্রী অবস্থা, এই গনহিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত লোকগুলোকে বোঝাবার সব চেষ্টা ব্যার্থ হলো। তাদের বিশ্বাস পোস্টদাতা এলাকার জন্য ঈশ্বরের আশির্বাদ স্বরুপ, কারণ এই পোস্টদাতা আসার পরে কয়েকজনার ব্যাবসায় লাভ হয়েছে, কয়েকজনার আবার বহু পুরাতন বাতের ব্যাথা সেরে গেছে। অনেকে তো এক কাঠি বেশি রসিক, পোস্টের প্রিন্টয়াউটের কপি তাবিজ বানিয়ে পরা এবং পোস্টদাতার কমেন্ট ধুয়ে পানি খাওয়া এলাকায় জনপ্রিয় হওয়া শুরু করলো। এরমধ্যে অনেকেই পোস্টের ভেতরে বিভিন্ন ভাষায় "আল্লাহ" বা "মুহাম্মদ রাসুল" বা "হরেকৃষ্ণ" লেখা দেখাও শুরু করে দিলো।
খুবই হতাশ হয়ে জনগনের কর্মকান্ড দেখতে লাগলাম। পোস্টদাতা হয়ে উঠলো আমার ফ্রেন্ডলিস্টে এক নতুন পয়গম্বর, যার সম্পর্কে কোন কথাই কেউ শুনতে চাইছে না। তাদের প্রবল পোস্টানুভুতি অত্যন্ত মোলায়েম এবং সদা সর্বদা জাগ্রত বৃক্ষের মতই খাড়া, একটু এদিক সেদিক বললেই তারা আহত হচ্ছে। কেউ কেউ একটু বেশি হিংস্র হয়ে আমাকে গালাগালও করছে। যারা অপেক্ষাকৃত মডারেট, তারা আবার হিংস্রভাবে গালাগালি করা লোকগুলোকে কৌশলে রক্ষা করে যাচ্ছে, তারা বলছে "হিংস্রদের গালাগালির জন্যে তো ঐ পোস্টদাতা দায়ী না। ওরা সহি পোস্ট-ফলোয়ার নয়!" অথচ তারা নিজেরাও জানে, ঐ হিংস্রতার পিছনে দায়ী ঐ পোস্টটিই। পোস্টদাতা না থাকলে এই সব হিংস্রতাও আর থাকবে না।
ধীরে ধীরে চিপ হয়ে উঠলো এলাকার একমে বা দ্বিতীয়াম সর্বশক্তিমান পরমকরুনাময় আল্লাতালা। আসমানের আল্লাতালা যেভাবে লাফ দিয়ে ভাল কিছুর কৃতিত্ব দাবী করে, এবং খারাপ হলে সব দায় মানুষ বা শয়তানের কাঁধে চাপিয়ে সটকে পরে, এই পোস্টদাতাও সেই চরিত্র অর্জন করলো। আসলে আসমানের আল্লা আর এই পোস্টদাতার ভেতরে কোন গুনগত পার্থক্যই নেই, উভয়ই কর্মক্ষমতাহীন, ভালমন্দ কিছু করার যোগ্যতাই কারো নাই। পরামর্শ/সমালোচনার কমেন্ট পড়া বা পড়ে শুনে সেই মত কাজ করার কোন ইচ্ছাই পোস্টদাতার নেই, আসমানের আল্লার মতই। প্রার্থণা করলেও যেই ৫০% সম্ভাবনা থাকে সফল বা বিফল হবার, না করলেও ঠিক একই পরিমাণ সম্ভাবনা থাকে। অথচ কারো রোগমুক্তি ঘটলে বা এক্সিডেন্টে বেঁচে গেলে লোকজন নিজে থেকেই চিপাল্লা বা আসমানী আল্লাকে কৃতিত্ব দিতে কুন্ঠাবোধ করে না। এটা তারা করে মূলত নিজেকে ঐ চিপাল্লা প্রিয় প্রমাণ করার জন্য, অন্যের চোখে ঐ চিপাল্লার ঘনিষ্ট প্রমাণ করে সম্মান আদায়ের জন্য।
তো একরাতে কেবা কাহারা চিপের ওয়ালে বিরোধী কথা শেয়ার করে রেখে গেল। সে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়, মহাবিশ্বে বোধকরি এমন ঘৃনিত কর্ম কেউ কখনও করে নি। ফেসবুকের মানুষের চাম্য, নারী ইত্যাদি বাদ যুক্ত কোমল পোস্টানুভুতি নিয়ে এই অমানবিক আচরণ, এই ঘৃনাবাদী প্রয়াশ রীতিমত উন্মাদনা সৃষ্টি করলো। "লাড়ায়ে টকবীর চিপাল্লা আকবর" ধ্বনিতে গ্রুপ উপগ্রুপের সদস্যরা একে অপরের উপরে ঝাঁপিয়ে পরতে লাগলো। একদল আরেকদলকে এই কাজের জন্য দায়ী করলো এবং এরপর থেকে একদল আরেকদলকে দুচোখে দেখতে পারছিল না, তারা একে অপরকে শ্রেনীশত্রু উপাধী দেয়াও শুরু করলো।
এসব দেখে শুনে হতভম্ব আমিও ভাবতে শুরু করলাম, চিপের কলেমা পড়ে এদের একটি দলে ভিড়ে যাব কিনা। কারণ ইতিমধ্যে এই গনহিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত লোকগুলো আমাকে "অসামাজিক", "বাস্তববুদ্ধিশুন্য", "ঘৃণাবাদী", "বুর্জোয়া ছাগু" আখ্যা দিয়ে ফেলেছে। আমি রীতিমত আতংকিত, কবে তারা আমার কল্লা নামিয়ে দেয়। এবং চিপের ওয়ালে হাগু করে ওনাদের পোস্টানুভূতিতে আঘাত করা লোকটা আমিই কিনা, তা নিয়েও আমাকে সন্দেহ করা শুরু হলো।
ফেসবুকে বেশ কিছু বুদ্ধিমান এবং পড়ালেখা করা তরুন সবসময়ই আমার পক্ষে ছিল, আমরা চেষ্টা করছিলাম জনগনকে বোঝাতে যে চিপের কোন অলৌকিক ক্ষমতা নেই। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আমার কিছুটা খ্যাতি আছে, আমি ফেসবুকের প্রচুর ছেলে মেয়ের বিনামূল্যের শিক্ষক ছিলাম। পদার্থবিদ্যা থেকে শুরু করে গণিত, সমাজবিজ্ঞানের সবচাইতে জটিল বিষয়গুলো আমি একদম সহজ বোধ্য করে তাদের বুঝিয়ে দিতে পারতাম বলে কেউ কেউ দাবী করতো। আমার পঞ্চম শ্রেনীতে পড়া ছাত্রটিও যখন অনার্সে পড়া ছেলেদের আপেক্ষিক তত্ত্ব বুঝাতো, তার কৃতিত্ত্ব তারা কিভাবে জানি আমাকেই দিতো। এভাবেই ফেসবুকের কিছু তরুন আমার পক্ষেই কথা বলতো। তবে সকলেই যে আমার পক্ষে ছিল তা নয়, আমার অনেক ছাত্রই বলতো, আমাকে তারা আমার জ্ঞানের কারণে সম্মান করে বটে, তবে চিপাল্লা বিরোধী কর্মকান্ডের জন্যে আমাকে সমানভাবে ঘৃণাও করে।
আমাদের, মানে আমার এবং আমার পক্ষের ছেলেমেয়েদের মুরুব্বি মহলে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা শুরু হয়ে গেল। ফেসবুকের ছেলেমেয়েদের বলা হলো আমার সাথে আর না মিশতে। আমাদের বলা হল, আমরা নাকি বাপের টাকায় ফেসবুক ইউজ করে পন্ডিতি করতে চেষ্টা করছি, বা আমরা নাকি ফ্যাশনের কারণে তাদের প্রিয় চিপাল্লার বিরোধীতা করছি।
তাদের যুক্তিজ্ঞান দেখে বিমোহিত হলাম, "সমাজ, ইতিহাস কি প্রমান করতে পেরেছে যে এই চিপাল্লার কোন অলৌকিক ক্ষমতা নেই?" যেন সমাজের খেয়ে পরে কোন কাজ নাই যে কোথাকার কোন পোস্টের অলৌকিক ক্ষমতা আছে কি নাই তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করে গবেষনায় বসবে! কি হাস্যকর কথাবার্তা!
এভাবে চলে যাচ্ছিল, মানুষজন এই চিপাল্লার প্রতি ক্রমশ আরো বেশি অনুরক্ত হয়ে উঠছিল। এরমধ্যে গজালো পোস্টের অলৌকিকত্বের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়া আরেকটা শ্রেনী, তারা বিভিন্নভাবে পোস্টের লাইন শব্দশৈলি তারিখ গবেষনা করে বের করে দিল, সমস্ত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারই পোস্টের মধ্যে সাংকেতিকভাবে লেখা আছে, শুধুমাত্র ইমান সহকারে বোঝার মত মানুষের অপেক্ষা।
তারা এও দাবী করলো, এই পুরান পোস্টের লাইন শব্দশৈলি তারিখে কোন অযৌক্তিক, পরস্প্রবিরোধী তত্বই নেই, থাকলে তা ব্যাখ্যার ভুল বা বোঝার ভুল।আমার সাথের কিছু তরুন চেষ্টা চালিয়ে গেল ঐ বিজ্ঞানবাদী মোল্লাদের বিরুদ্ধে, তারা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ব ঘেটে বিজ্ঞানবাদীমোল্লাদের কথা ভুল প্রমানের চেষ্টা চালিয়ে গেল এবং মুরুব্বি মহলে যথারীতি "রক্তগরম তাই বিশ্বাস নাই" বা "ফ্যাশনের বুর্জোয়া" বা "সস্তাজনপ্রিয়তার লোভে হটকারী মাথাগরম তরুন" খেতাবে ভুষিত হলো।
এর উপরে মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভুত হলেন কিছু পোস্ট মর্ডানিস্ট এবং পোস্ট কলোনিয়ালিস্ট। পোস্ট মডার্নিস্টদের দাবী মতে, চিপাল্লার এই অলৌকিকত্ত্বের দাবীও তারা গুরুত্ত্ব সহকারে বিচার বিশ্লেষণ করার পক্ষপাতি এবং কোন ধরণের দাবীকেই তারা উড়িয়ে দিতে চান না। তারা চিপাল্লাকে অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন বা অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন নয়, এগুলোর কোনটা বলতেই রাজি নয় এবং যেহেতু জনগন চিপাল্লার এই অলৌকিকত্বে বিশ্বাস করছে, তারা সেটাকে সেভাবেই দেখার পক্ষপাতি। আমি তাদের বুঝালাম এই আহাম্মকির কোন মানেই নাই, এ মিথ্যা, এ এক প্রতারণা। কিন্তু তাদের কাছে সত্য মিথ্যা বলেই কিছু নেই, তারা সত্য বা মিথ্যার মানদন্ডে কিছুকে বিচার করতে রাজি নয়। তারা সত্য মিথ্যার বাইরে থেকে ঘটনাটাকে দেখতে ইচ্ছুক এবং জনস্বার্থ ব্যাপারটাই তাদের কাছে আপেক্ষিক।
অন্যদিকে পোস্ট কলোনিয়ালিস্টরা তো রীতিমত যুদ্ধাংদেহী হয়ে আমাকে পুজিবাদের দালাল, আধিপত্যবাদী ইউরোপ আমেরিকা ইহুদী নাসারাদের চর বলেই গন্য করলো। তাদের দাবী হচ্ছে, এই পোস্ট আমাদের ওয়ালেরই অংশ, এবং এটাকে এখান থেকে সড়াতে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা, সিআইএ, ইজরাইল, ভারত এবং পাকিস্তান ক্রিয়াশীল। তারা এই কাজের জন্য আমাকে নিয়োগ করেছে এবং আমাকে রীতিমত টাকা দিচ্ছে এই চিপাল্লার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা তৈরির জন্য।
তাদেরকে বোঝালাম, আমাদের বিদ্যুত সমস্যা, আমাদের স্বাস্থ্য সমস্যা, এইগুলোও তো আমাদের নিজস্ব। কিন্তু নিজস্ব বলে সেগুলোকে লালন পালনের কি অর্থ হতে পারে? ইউরোপ আমেরিকাতেও এক সময়ে এই সমস্যাগুলো ছিল এবং তারা নিজেদের বুদ্ধি ব্যাবহার করে ক্রমশ এর থেকে উত্তোরণের পথ বের করেছে। আমরাও কেন এই সমস্যাগুলো থেকে উত্তোরণের পথ না খুঁজে এই সমস্যাগুলোকে আমাদের বৈশিষ্ট্য বলে গন্য করছি? এবং এই সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলা লোকদের আমেরিকার দালাল বলে উড়িয়ে দিচ্ছি! কিন্তু বৃথা চেষ্টা।
পোস্ট মডার্নিস্টরা যেমন ইউরোপ আমেরিকার শিক্ষায় শিক্ষিত, পোস্ট কলোনিয়ালিস্ট দেবতারাও ইউরোপ আমেরিকা দাপিয়ে বেড়িয়ে ইউরোপ আমেরিকার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ইউরোপীয় বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে প্রাচ্য মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটু হা হুতাশ করেছে দেখেই আমরা মুগ্ধ!
এই দুই শ্রেনীর সাথে তর্ক বিতর্কে রীতিমত বিরক্ত হওয়া শুরু করলাম, এবং বিজ্ঞানবাদী মোল্লাদের ক্রমাগত যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে উঠলাম। এর মধ্যে কিছু "মডারেট" আমাকে সেই চিপাল্লার অলৌকিকত্ত্ব বোঝাবার আপ্রান চেষ্টা করলো, আবার কোন কোন মডারেট বিভিন্ন পোস্টের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বুঝালো, কিছু বামপন্থী এসে পুঁজিবাদী ভোগবাদী সমাজ ব্যাবস্থায় মার্ক্সীয় সমাজতত্ত্বে পোস্টের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী গুরুত্ত্ব আমাকে বোঝাবার চেষ্টা করে ব্যার্থ হলো। আমার অবিশ্বাসী মন এবং সোজাসাপ্টা কথাবার্তাকে তারা স্বল্পজ্ঞান সম্পন্ন বালখিল্যতা বলে প্রচার করলো, এবং আমাকে রীতিমত মৌলবাদী আখ্যা দেয়া শুরু হতে লাগলো।
এসব যন্ত্রণায় শেষমেষ অতিষ্ট হয়ে এক রাতে কয়েকজন তরুনকে নিয়ে চিপাল্লাকে ব্লক, রিপোর্ট করে ছুড়ে ফেলে দিলাম আবর্জনার স্তুপে। আমার কল্লা কাটার ফতোয়া দেয়া হলো, আমাকে মুরতাদ ঘোষণা করা হলো। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কেউ ভেবেও দেখলো না, যে অলৌকিক ক্ষমতাবান ঐ চিপাল্লার এতটুকু ক্ষমতা ছিল না যে সে আমাকে বাধা দেয়, সেটাকে কেটে টুকরা টুকরা করার সময় একবারও প্রতিবাদ করলো না সর্বশক্তিমান চিপাল্লা।
এই প্রশ্নটি তাদের কাছে যখন করলাম, তারা আমাকে বলতে লাগলো, চিপাল্লা আমি মারা যাবার পরে প্রতিশোধ নেবে, মৃত্যুর পরের দুনিয়ায় সে আমার কল্লা কাটবে, আমার হাত পা কাটবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
যাইহোক, এরপর থেকে আর রাস্তায় কোন সমস্যা থাকলো না। আমার অয়ালে এখন ইচ্ছামত সবার পোস্ট দেখা যায়, ছবি শেয়ার দেখা যায়, রক্তের প্রয়োজনের মেসেজ দেখা যায়। কেউ চিপাল্লাকে সরাবার কাজটি করার জন্য আমাকে একবার ধন্যবাদও দিলো না, উলটা আমি হয়ে উঠলাম জনশত্রু। কিন্তু চিপাল্লাকে সরাবার সুফল সকলেই ভোগ করতে লাগলো।
তাই কোন কৃতিত্ত্ব পাইনি দেখে কোন আফসোস নেই। মানুষ একটু গালমন্দ করছে করুক, কিন্তু এর সুফল তো সকলেই পাচ্ছে এবং পেতেই থাকবে।
এরপরে একদিন দেখলাম, ওয়াল ভরে পোস্টগুলা যেখানে ছিল, সেখানে একটি ফ্যান পেজ বানানো হচ্ছে!!!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ইহা একটা স্যাটায়ার পোস্ট, কেউ কোন অনুভুতিতে আঘাত না পাইলে খুশি হব।
আমার খুব প্রিয় গল্পের ছায়া অবলম্বনে...

Comments

Popular posts from this blog

দুঃসময় বা দুঃস্বপ্নের সময়...

কেন যেন মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্ন দেখছি, আর প্রচন্ড অসহায় হয়ে চাচ্ছি, কেউ আমার ঘুমটা এক ঝটকায় ভেঙ্গে দিক। দুঃস্বপ্নের শুরু মায়ের অসুস্থতা দিয়ে। এখান ওখান করে শেষ পর্যন্ত কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৌছালাম, ইমারজেন্সি-তে ওদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতেই মেইল এল, আম্মার COVID-19 পজিটিভ। সব ভয় ভুলে, চলে গেলাম রোগি ভরা ওয়ার্ডে, বেডে শুইয়ে দিলাম, ডায়ালাইসিস করে দিলাম। চলে আসার সময়, একবার মনে হল, এর পর আর দেখা হবে না। দু'দিন পর, ICU তে যায়গা পাওয়ায়, একটু নিশ্চিন্তে অফিসের একটা মিটিং এ জয়েন করলাম। মাঝামাঝি সময় ফোন এল, আম্মু সব চিকিৎসার বাইরে চলে গেছে, আম্মুকে নিয়ে আসতে হবে। সেদিন সেপ্টেম্বরের ৩০, ২০২০। ঈদের আর দুদিন বাকি। পরদিন বানানি কবরস্থানে মাটি চাপা দিলাম। সেই সময় প্রচন্ড বৃষ্টি, আগের দিন থেকেই স্বাভাবিকভাবেই চলছিলাম, কিন্তু কেন যেন এখন আর পারলাম না, সকল আত্মসংযমের বাধ ভেঙ্গে চুরে, বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে কান্না এল।  বৃষ্টির পানি, মুখের মাস্ক, পিপিই সব মিলে সেই চোখের পানি লুকিয়েই ছিল হয়তো, খেয়াল করা হয়নি। বা সেই অবস্থায় ও ছিলাম না।  এর পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন, বাসার সবার। এর মাঝেই বাবার পাতলা পায়খা...

জেনারেশন গ্যাপ

জেনারেশন এ পরিবর্তন আসে অবশ্যম্ভাবী হয়ে। এর কোন ব্যতিক্রম নাই। কেউ চাক বা না চাক এই প্রক্রিয়া চলবেই। ভাল লাগুক বা মন্দ লাগুক কেউ সময় কে থামাতে পারবে না। এর মধ্যে বিতর্ক এসে যায় ভাল পরিবর্তন আর মূল্যবোধের নিম্নগামীতা নিয়ে। কিন্তু আমি সেসব নিয়েও কথা বলছি না। আমি বলছি কারণ যুগে যুগে সব মানুষের অপ্ত বাক্য ‘ দুনিয়াটা রসাতলে গেল ’। আমার দাদা আমার দাদী কে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং তার মৃত্যুশোকে সন্ন্যাসী হন। তিনি তখন অবশ্য ছিলেন যুব-সমাজ রসাতলে যাবার অন্যতম উদাহরণ। এখন অবিশ্বাস্য লাগতেই পারে কিন্তু তখন কেউ তাকে ছেড়ে কথা বলেনি। আমার বাবা রবীন্দ্র সঙ্গীত এর ভীষণ ভক্ত ছিল কিন্তু তার সময় এটা ছিল সঙ্গীত এর নামে অশ্লীলতা। আব্বুকেও সিনেমা হলে সিনেমা দেখাতে যাবার জন্য অসংখ্যবার শুনতে হয়েছে যুব-সমাজ রসাতলে গেল। এসব সিনেমা কে এখন আমরা আর্ট পিস এর সম্মান দেই। এখন সবার গা-জ্বালা করা একটা সর্বনাম হল ডিজুস জেনারেশন বা আধুনিক ইয়ো পোলাপান। সবার মত অনুযায়ী তাদের কোন শেকড়ই নাই এবং এরা অন্ধভাবে পশ্চিমা সভ্যতা অনুকরণ ও অনুসরণ করে। কিন্তু সময় যখন সব বদলায় তখন সময় এর সাথে যুদ্ধ করা; আমি ঠিক কিন্...

Shortcut to Happiness...

Today, when I was getting out, one of my friend asked that once I told him, his relation with his wife will be cold. He is getting married within 3 months. Now he asks, why I said that. I was confused, when I told that, he was not that type of guy. Then, why? I told that, you have grown chariest. But, as it goes, everyone forgets the reason why they are in this race. I took the example of another friend. She doesn't like to work, she doesn't like job. But still she is doing it. That's not the problem. Problem is, she doesn't know why she is doing all these. It is killing her slowly. When I was in school, I was constantly persuaded by my parents to study hard so that I could stand First, Second or Third. Then I was forced to take Science in stead of Music on my Secondary school. Somehow, I got Star marks and it continued throughout my Higher Secondary. The pressure didn't fall, persuasion went on and on. Like I'm in the world not to live, to race. At univ...