Skip to main content

মহান হবার ফর্মুলা আবিষ্কারের গল্প... (পঞ্চম পর্ব - ভিন্ন জগত)



বহুদিন ধরেই ঠিকভাবে কলম ধরা হচ্ছে না। ১৫" জগতের কির্বোডটাকে আমি এখনও ঠিক আত্মস্থ করে উঠতে পারিনি, তাই আমার লিখার ক্ষেত্রে কলমই ভরসা। কিন্তু নতুন একটা জীবনে সারভাইবালের সংগ্রামে ব্যস্ততা এতোই বেড়ে গিয়েছে যে কাগজ, কলম এবং আমি; এই তিনটাকে গুছিয়ে একসাথে করা হয়ে উঠছে না। এরই মধ্যে হয়েছে বেশ কিছু পট পরিবর্তন। পদ্মা, মেঘনায় বয়ে গিয়েছে বহুদূর আর ফেসবুকে পার হয়ে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ স্ট্যটাস আর কমেন্ট। তাই আমিও মাঝের কিছু ক্যচাল বদ দিয়ে দুই ধাপ সামনে লাফ দিলাম। যদি আবার সময় সুযোগ হয় স্মৃতিচারণের তখন দেখা যাবে ওগুলো।
বিয়ে করে ফেলেছি মার্চের দুই, কেউ জানে না।
নতুন বাসায় উঠেছি মার্চের চার। নতুন জীবনের শুরুও সেদিন থেকেই। এক রুমের ছোট্ট একটা সাবলেট বাসা। সম্বল, দু'-তিন সেট জামা কাপড়, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল। এছাড়া আর কিচ্ছু নেই। সবে বেতন পেয়েছি। অর্ধেকটা বাড়িভাড়া আর বাকিটায় মাস খরচা ছাড়াও আরও বেশ কিছু খরচা। লেপ-তোষক, কাঁথা-বালিশ থেকে শুরু করে সাবান-শ্যাম্পু, টুথপেস্ট-টুথব্রাশ সব কিছু এটা দিয়েই কভার করতে হবে। জমানো টাকাও নেই। একটা অনিশ্চিত যাত্রার মতোই সংসার জীবনের যাত্রা শুরু।

সম্ভবত, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ সাইবার-ওয়ার পরবর্তী সময়। তাই টোনা-টুনির সিদ্ধান্ত, পৃথিবী উল্টে যায় যাক, সুতো থেকে জুতো পর্যন্ত সব হবে আমার নিজের দেশের। লেপ কাঁথা বালিশ নিয়ে চিন্তা নেই কিন্তু, ছুরি-চামচ, প্লেট-গ্লাস সবকিছু দেশী জিনিস দিয়ে কভার করা একটু কষ্টকর হয়ে যায়। তবুও কিভাবে যেন সবই ম্যনেজ হয়ে গেল। ভুগ তে হল সবচে হাস্যকর একটা জিনিস নিয়ে; টুথপেস্ট। যেখানেই যাই, দেখি পেপসোডেন্টের জীবাণুমুক্ত মুখে ক্লোজআপের বিগলিত হাসি বা কোল-গেটের ঝকঝকে দাঁত। কোন একটা কারণে পেস্ট আমার অতোটা পছন্দ না, তাই জেলই খুঁজছি। দেশি টুথপেস্ট বা জেল চাইলে দোকানদার এমন ভাবে তাকায় যেন আমি টুথপেস্ট না, হিব্রু ভাষায় মৃতসঞ্জীবনী সুধা চাইছি। শেষ পর্যন্ত কিছু না পেয়ে নিলাম মেরিল এর বেবি জেল, অরেঞ্জ ফ্লেভার্ড। প্রচণ্ড মিষ্টি, মুখে দিলেই কেমন আহমেদের জেলি খাচ্ছি মনে হয়। আমার, মেরিল ফ্রেশ জেল বলে একটা কিছুর এ্যড দেখেছিলাম বলে মনে পড়ছিল, খুঁজে পেলাম না কোথাও, সম্ভবত প্রোডাক্টটা বন্ধ হয়ে গেছে। শেষে স্কয়ারের ফ্রেশজেল পেলাম। দাঁতের সমস্যার সমাধান হল। এখন দাবি করতে পারি আমাদের সংসারের প্রতিটা জিনিসই আমার নিজের দেশের। পুরনো দিনের পাঁচটা বিদেশী জিনিসই আমার সাথে আছে, সেটা আমার মোটরসাইকেল। জাপানি ইঞ্জিন, ইন্ডিয়ান ফিটিংস। আর আছে, ল্যাপটপ যা অফিসের, চায়নার ম্যানুফ্যকচারড মোবাইল ফোন। এই দুর্দিনে এগুলোকে চাইলেও ফেলে দিতে পারছি না।
এরপর পদ্মা-মেঘনার পানি গড়াল আরও কিছুদূর। আমরা দুজন মিলে তিন রুমের একটা ছোট্ট ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ফেললাম। যোগ হল আরও নতুন কিছু চাহিদা। লাইট-ফ্যান, চুলা, হাড়ি-পাতিল, পর্দা সহ আরও বেশ কিছু খুঁটিনাটি। আমাদের সেই পণ থেকে এখনও সরে আসিনি, তাই আরও দু'-চার-পাঁচ বার অভিযান চলল দেশি পণ্যের খোজে। ১০-১৫ দিনের মাথায় এই টোনা-টুনির সংসার মোটামুটি প্রয়োজনীয় সবকিছু দিয়েই ভরে উঠল। এখন যা বাকি তা হল ছোট কিছু বিলাসিতা। যেমন - ঠাণ্ডা পানি এখনও খেতে পাই না, প্রতিদিনের বাজার আর রান্না প্রতিদিন করতে হয়, বেশি রাঁধলে নষ্ট, আর খাবার চুলাতেই গরম করতে হয়। যেহেতু, দুজনের কারোরই সংসারের কোন কাজের অভিজ্ঞতা নেই, সব কিছুতেই অপচয়ের পরিমাণটাও অনেক বেশি। ভাত রাধার মাপ তো কোন দিনই মিলে না। প্রতিদিনই কিছু খাবার ফেলে দিতে হয়। টোনা-টুনি দুজনে মিলে রাধার সময়, হাড়ি খালি করতে নষ্ট খাবার ফেলে দেই, আর মন খারাপ করে তাকিয়ে থাকি। অনেক কষ্ট আর অনেক শ্রম এই এক মুঠো ভাতের পেছনেও।
অফিস শেষ হয় ৬টায়। মনে হয় যেন সাড়ে পাঁচটাতেই বের হয়ে যাই। ঘরে যাই, নিজের ঘরে। দুই টোনা-টুনি মিলে প্রতিদিনই কিছু না কিছু স্বপ্নের জান বুনছি। আর তো কয়েকটা দিন, এরপরই সব ধারদেনা শোধ হয়ে যাবে। তখন ঈদের বোনাসের সাথ আরও দেড় দু'মাসের কষ্ট যোগ করলেই কিস্তিতে একটা ফ্রিজ নিতে পারব। আরও চার-পাঁচ মাসের মাথায় হয়তো ওভেনও হয়ে যাবে। আমাদের চয়ে বেশি সুখী আর কে আছে দুনিয়ায়?
১৫" দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ পুরোপুরি শেষ হয়ে যায় নি তবে, খুবই কমে এসেছে। শুধু তাই নয়। আরও একজন ব্লগারকেও আমাদের কল্যাণে ওই দুনিয়া প্রায় ছেড়ে দিয়ে আমাদের ছোট্ট টোনা-টুনির সংসারে একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠতে হয়েছে। কাওসার আহমেদ; প্রকাশ্যে কৃতজ্ঞতা স্বীকারে দোষ নেই; আপনি না থাকলে হয়তো এই সুখী সংসারটা স্বপ্ন হিসেবেই থেকে যেত আরও বেশকিছু দিন, মাস অথবা বছর। অনিশ্চিত যাত্রায় আমরা যদি বোকা হই, যদি আমরা হই অর্বাচীন, তবে আপনি হলেন অর্বাচীনের স্বপ্ন-সখা।
টোনা-টুনির সংসার বাবুই পাখির মতন রোদ, বৃষ্টি-ঝড়ে কষ্ট না পেলেও জীবন ঝড়ে মাঝে মাঝেই এলোমেলো হয়ে যেতে চায়, হয়ও। এমনই কিছু দুর্ঘটনায় আমাদের এই ছোট সংসারটিও বেশ বিধ্বস্ত হল। শেষ পর্যন্ত ছোট্ট সেই বাসাটিও ছেড়ে দিতে হল। উঠলাম বাবা-মার সাথে। সেই পুরনো ঘর, সেই পুরনো জঞ্জাল, সেই পুরনো ঘ্রাণ। কিন্তু বদলে যাওয়া সময় আর বদলে যাওয়া জীবন। তাই আবারও শুরু হল গুছিয়ে নেবার সংগ্রাম।

Popular posts from this blog

দুঃসময় বা দুঃস্বপ্নের সময়...

কেন যেন মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্ন দেখছি, আর প্রচন্ড অসহায় হয়ে চাচ্ছি, কেউ আমার ঘুমটা এক ঝটকায় ভেঙ্গে দিক। দুঃস্বপ্নের শুরু মায়ের অসুস্থতা দিয়ে। এখান ওখান করে শেষ পর্যন্ত কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৌছালাম, ইমারজেন্সি-তে ওদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতেই মেইল এল, আম্মার COVID-19 পজিটিভ। সব ভয় ভুলে, চলে গেলাম রোগি ভরা ওয়ার্ডে, বেডে শুইয়ে দিলাম, ডায়ালাইসিস করে দিলাম। চলে আসার সময়, একবার মনে হল, এর পর আর দেখা হবে না। দু'দিন পর, ICU তে যায়গা পাওয়ায়, একটু নিশ্চিন্তে অফিসের একটা মিটিং এ জয়েন করলাম। মাঝামাঝি সময় ফোন এল, আম্মু সব চিকিৎসার বাইরে চলে গেছে, আম্মুকে নিয়ে আসতে হবে। সেদিন সেপ্টেম্বরের ৩০, ২০২০। ঈদের আর দুদিন বাকি। পরদিন বানানি কবরস্থানে মাটি চাপা দিলাম। সেই সময় প্রচন্ড বৃষ্টি, আগের দিন থেকেই স্বাভাবিকভাবেই চলছিলাম, কিন্তু কেন যেন এখন আর পারলাম না, সকল আত্মসংযমের বাধ ভেঙ্গে চুরে, বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে কান্না এল।  বৃষ্টির পানি, মুখের মাস্ক, পিপিই সব মিলে সেই চোখের পানি লুকিয়েই ছিল হয়তো, খেয়াল করা হয়নি। বা সেই অবস্থায় ও ছিলাম না।  এর পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন, বাসার সবার। এর মাঝেই বাবার পাতলা পায়খা...

জেনারেশন গ্যাপ

জেনারেশন এ পরিবর্তন আসে অবশ্যম্ভাবী হয়ে। এর কোন ব্যতিক্রম নাই। কেউ চাক বা না চাক এই প্রক্রিয়া চলবেই। ভাল লাগুক বা মন্দ লাগুক কেউ সময় কে থামাতে পারবে না। এর মধ্যে বিতর্ক এসে যায় ভাল পরিবর্তন আর মূল্যবোধের নিম্নগামীতা নিয়ে। কিন্তু আমি সেসব নিয়েও কথা বলছি না। আমি বলছি কারণ যুগে যুগে সব মানুষের অপ্ত বাক্য ‘ দুনিয়াটা রসাতলে গেল ’। আমার দাদা আমার দাদী কে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং তার মৃত্যুশোকে সন্ন্যাসী হন। তিনি তখন অবশ্য ছিলেন যুব-সমাজ রসাতলে যাবার অন্যতম উদাহরণ। এখন অবিশ্বাস্য লাগতেই পারে কিন্তু তখন কেউ তাকে ছেড়ে কথা বলেনি। আমার বাবা রবীন্দ্র সঙ্গীত এর ভীষণ ভক্ত ছিল কিন্তু তার সময় এটা ছিল সঙ্গীত এর নামে অশ্লীলতা। আব্বুকেও সিনেমা হলে সিনেমা দেখাতে যাবার জন্য অসংখ্যবার শুনতে হয়েছে যুব-সমাজ রসাতলে গেল। এসব সিনেমা কে এখন আমরা আর্ট পিস এর সম্মান দেই। এখন সবার গা-জ্বালা করা একটা সর্বনাম হল ডিজুস জেনারেশন বা আধুনিক ইয়ো পোলাপান। সবার মত অনুযায়ী তাদের কোন শেকড়ই নাই এবং এরা অন্ধভাবে পশ্চিমা সভ্যতা অনুকরণ ও অনুসরণ করে। কিন্তু সময় যখন সব বদলায় তখন সময় এর সাথে যুদ্ধ করা; আমি ঠিক কিন্...

Personal notes on my Transition form Windows to Linux - Part 1 : Prolouge

Deciding to move to Open-source/Free software and Linux for everyday task is not a small decision. Especially when living in Bangladesh where almost 80% of the people still uses ASCII font based system for typing Bangla language, paying for software is a very remote idea which happens to only to the “Other people”.