Skip to main content

স্মৃতি তুমি বেদানার পাতা থেকে ...

(ফেব্রুয়ারী মাসে নাগরিকে প্রকাশিত...)

ভাষার মাসে (ব্যক্তিগতভাবে আমি ভাষার মাসে বিশ্বাস করি না, আমার ভাষা সারাজীবনের জন্য, প্রতিটি ক্ষণ, প্রতি মুহূর্তের জন্য।) আমার ইউনিভার্সিটি জীবনের একটা ভাষা বিষয়ক মজার অভিজ্ঞতার কথা বলতে ইচ্ছে করছে।
আমাদের এই মাটি প্রায় ২০০ বছর ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। তাই এই ভাষাটা আমাদের জীবনের সাথে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জুড়ে গেছে। যথারীতি আমার ইউনিভার্সিটিও একটা ইংরেজি মিডিয়াম ইউনিভার্সিটি। যার একটা ভালো দিক হল, ঘটনাটা নিজের ভাষা নিয়ে না। বত্রিশপাটির হাসি বত্রিশপাটির হাসি বত্রিশপাটির হাসি
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ভাগ্য হয় নি। তাই একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলাম। এসব ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের একমাত্র ধ্যান জ্ঞান হল কোনমতে পড়াশোনা করে পাশ করে বের হওয়া। তাই এদের বাকি দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। যে সব শিক্ষক ক্লাস নেন তারাও তাদের কাজে বেশ দক্ষ এবং ব্যস্ত। বেশিরভাগ শিক্ষকই আগে বিভিন্ন পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে প্রতাপের সাথে শিক্ষকতা করতেন, চাকরি ছাড়ার পর তারা এখানে এসেছেন। বেশিরভাগের ধারনা হল, আমাদের মাথায় ঘিলু নামক বস্তুটা নেই, তাদের আগের কর্মস্থলে এর ছড়াছড়ি ছিল।
এই গল্পটা আমার ডিপার্টমেন্টের এক ছোট ভাইয়ের মুখে শোনা। আমাদের ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের প্রত্যেক টিচারই অনেক সিনিয়র। আর সিনিয়র টিচাররা কেন যেন মেয়েদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট থাকেন। (একান্তই আমার নিজস্ব অভিমত। আমার ধারনা তারা নিজেদের বেগম রোকেয়ার টাইমের মনে করেন আর মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় আসলে খুব খুশি হন।)। আবার প্রত্যেক সিনিয়র টিচারের ক্লাসেই কিভাবে যেন একটা মেয়ে থাকে বেস্ট স্টুডেন্ট।
তো ধরি মেয়েটির নাম মেহজাবিন (এই নামের কেউ মাইন্ড খাইয়েন না)। সে ম্যাথ ৩ ক্লাসের সেরা স্টুডেন্ট। স্যর তার নামে অজ্ঞান। কিছু হলেই, "মা বলতো, এটা কি?", "মেহজাবিন, বলতো ও কি ঠিক বলেছে?", "মা কাল কিন্তু তোমাদের কুইজ নিব।" কিংবা অন্যদের কে "এটা পারো নাই??? মেহজাবিন, মা, ওদের একটু দেখিয়ে দাও"। পুরো ক্লাস এই মেহজাবিনকে শত্রু হিসেবেই গণ্য করা শুরু করল কয়েকদিনের মাথায়।
ঐ স্যরের একটা স্বভাব ছিল, উনি নতুন কিছু ক্লাসে পড়ালে, শেষ হবার সাথে সাথেই তার পরীক্ষা নিতেন। তো এমনই এক দিন উনি ক্লাস নিয়েছেন এক ধরনের গ্রাফ নিয়ে। সবশেষে, পরীক্ষা নেয়া শুরু। বিশাল একটা অঙ্ক দিয়ে বললেন "ড্র দিস গ্রাফ"।
পুরো ক্লাস ব্যস্ত গ্রাফ আঁকায়। মেহজাবিন কোন কারণে সেইদিন ক্যালকুলেটর আনতে ভুলে গিয়েছিল। তাই ওর অনেক সময় লাগছিল আঁকতে। এদিকে ক্লাস প্রায় শেষ, স্যর অনেক অধৈর্য হয়ে গেছেন। মেহজাবিন কি আজ পারবে না!! এটা কি হয়!!! এদিকে মেহজাবিন তখন অঙ্ক করা শেষ করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে ক্যালকুলেটরের জন্য।
স্যর ভাবলেন শেষ। তো উনি জিগ্যেস করলেন, "মেহজাবিন, ইজ ইয়োর ফিগার কমপ্লিট??"।
মেহজাবিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে আর ফাজিল পোলারা এই কথার ভিন্ন অর্থ বের করে মজা নেবার চেস্টা করছে।
স্যর কি বুঝলেন কি জানে, বললেন, - "ডোন্ট ফিল শাই, শো আস ইয়োর ফিগার।"
এইবার,... পুরো ক্লাসের দাঁত বের হয়ে পরেছে ...
মেহজাবিন তখন প্রায় কাঁদো কাঁদো, কিন্তু স্যর নাছোড়বান্দা - "মেহজাবিন, মে বি ইয়োর ফিগার ইজ নট কমপ্লিট, বাট ইউ ক্যান শো আস হোয়াট ফিগার ইউ মে হ্যাভ গট, নো শেম ইন দিস। প্লিজ শো আস ইয়োর ফিগার"।
এইবার পুরো ক্লাস অট্টহাসিতে, ফেটে যায় যায় অবস্থা, আর মেহজাবিনকে বাঁচিয়ে দিতেই মনে হয় ক্লাস শেষের ঘণ্টা বেজে উঠল।
স্যর তার ছাত্রদের এহেন বেয়াদবিতে খুবই বিরক্ত এবং একই সাথে মেহজাবিন পারে নাই তাই খুব দুঃখিত। তাই উনি ঘোষণা দিলেন,
"ওকে, দিস উইল বি ইয়োর এসাইনমেন্ট ফর টুমরো। মেহজাবিন, আই ডিড নট এক্সপেক্ট, ইউ ক্যান নট কমপ্লিট দিস। সো, টুমরো, আই উইল চেক ইয়োর ফিগার ফার্স্ট।"
এবং এই রায় দিয়ে উনি ভরা মজলিস থুক্কু ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলেন।

Comments

Popular posts from this blog

দুঃসময় বা দুঃস্বপ্নের সময়...

কেন যেন মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্ন দেখছি, আর প্রচন্ড অসহায় হয়ে চাচ্ছি, কেউ আমার ঘুমটা এক ঝটকায় ভেঙ্গে দিক। দুঃস্বপ্নের শুরু মায়ের অসুস্থতা দিয়ে। এখান ওখান করে শেষ পর্যন্ত কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৌছালাম, ইমারজেন্সি-তে ওদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতেই মেইল এল, আম্মার COVID-19 পজিটিভ। সব ভয় ভুলে, চলে গেলাম রোগি ভরা ওয়ার্ডে, বেডে শুইয়ে দিলাম, ডায়ালাইসিস করে দিলাম। চলে আসার সময়, একবার মনে হল, এর পর আর দেখা হবে না। দু'দিন পর, ICU তে যায়গা পাওয়ায়, একটু নিশ্চিন্তে অফিসের একটা মিটিং এ জয়েন করলাম। মাঝামাঝি সময় ফোন এল, আম্মু সব চিকিৎসার বাইরে চলে গেছে, আম্মুকে নিয়ে আসতে হবে। সেদিন সেপ্টেম্বরের ৩০, ২০২০। ঈদের আর দুদিন বাকি। পরদিন বানানি কবরস্থানে মাটি চাপা দিলাম। সেই সময় প্রচন্ড বৃষ্টি, আগের দিন থেকেই স্বাভাবিকভাবেই চলছিলাম, কিন্তু কেন যেন এখন আর পারলাম না, সকল আত্মসংযমের বাধ ভেঙ্গে চুরে, বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে কান্না এল।  বৃষ্টির পানি, মুখের মাস্ক, পিপিই সব মিলে সেই চোখের পানি লুকিয়েই ছিল হয়তো, খেয়াল করা হয়নি। বা সেই অবস্থায় ও ছিলাম না।  এর পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন, বাসার সবার। এর মাঝেই বাবার পাতলা পায়খা...

জেনারেশন গ্যাপ

জেনারেশন এ পরিবর্তন আসে অবশ্যম্ভাবী হয়ে। এর কোন ব্যতিক্রম নাই। কেউ চাক বা না চাক এই প্রক্রিয়া চলবেই। ভাল লাগুক বা মন্দ লাগুক কেউ সময় কে থামাতে পারবে না। এর মধ্যে বিতর্ক এসে যায় ভাল পরিবর্তন আর মূল্যবোধের নিম্নগামীতা নিয়ে। কিন্তু আমি সেসব নিয়েও কথা বলছি না। আমি বলছি কারণ যুগে যুগে সব মানুষের অপ্ত বাক্য ‘ দুনিয়াটা রসাতলে গেল ’। আমার দাদা আমার দাদী কে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং তার মৃত্যুশোকে সন্ন্যাসী হন। তিনি তখন অবশ্য ছিলেন যুব-সমাজ রসাতলে যাবার অন্যতম উদাহরণ। এখন অবিশ্বাস্য লাগতেই পারে কিন্তু তখন কেউ তাকে ছেড়ে কথা বলেনি। আমার বাবা রবীন্দ্র সঙ্গীত এর ভীষণ ভক্ত ছিল কিন্তু তার সময় এটা ছিল সঙ্গীত এর নামে অশ্লীলতা। আব্বুকেও সিনেমা হলে সিনেমা দেখাতে যাবার জন্য অসংখ্যবার শুনতে হয়েছে যুব-সমাজ রসাতলে গেল। এসব সিনেমা কে এখন আমরা আর্ট পিস এর সম্মান দেই। এখন সবার গা-জ্বালা করা একটা সর্বনাম হল ডিজুস জেনারেশন বা আধুনিক ইয়ো পোলাপান। সবার মত অনুযায়ী তাদের কোন শেকড়ই নাই এবং এরা অন্ধভাবে পশ্চিমা সভ্যতা অনুকরণ ও অনুসরণ করে। কিন্তু সময় যখন সব বদলায় তখন সময় এর সাথে যুদ্ধ করা; আমি ঠিক কিন্...

Personal notes on my Transition form Windows to Linux - Part 1 : Prolouge

Deciding to move to Open-source/Free software and Linux for everyday task is not a small decision. Especially when living in Bangladesh where almost 80% of the people still uses ASCII font based system for typing Bangla language, paying for software is a very remote idea which happens to only to the “Other people”.