Monday, October 15, 2012

স্মৃতি তুমি বেদানার পাতা থেকে ...

(ফেব্রুয়ারী মাসে নাগরিকে প্রকাশিত...)

ভাষার মাসে (ব্যক্তিগতভাবে আমি ভাষার মাসে বিশ্বাস করি না, আমার ভাষা সারাজীবনের জন্য, প্রতিটি ক্ষণ, প্রতি মুহূর্তের জন্য।) আমার ইউনিভার্সিটি জীবনের একটা ভাষা বিষয়ক মজার অভিজ্ঞতার কথা বলতে ইচ্ছে করছে।
আমাদের এই মাটি প্রায় ২০০ বছর ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। তাই এই ভাষাটা আমাদের জীবনের সাথে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জুড়ে গেছে। যথারীতি আমার ইউনিভার্সিটিও একটা ইংরেজি মিডিয়াম ইউনিভার্সিটি। যার একটা ভালো দিক হল, ঘটনাটা নিজের ভাষা নিয়ে না। বত্রিশপাটির হাসি বত্রিশপাটির হাসি বত্রিশপাটির হাসি
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ভাগ্য হয় নি। তাই একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলাম। এসব ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের একমাত্র ধ্যান জ্ঞান হল কোনমতে পড়াশোনা করে পাশ করে বের হওয়া। তাই এদের বাকি দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। যে সব শিক্ষক ক্লাস নেন তারাও তাদের কাজে বেশ দক্ষ এবং ব্যস্ত। বেশিরভাগ শিক্ষকই আগে বিভিন্ন পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে প্রতাপের সাথে শিক্ষকতা করতেন, চাকরি ছাড়ার পর তারা এখানে এসেছেন। বেশিরভাগের ধারনা হল, আমাদের মাথায় ঘিলু নামক বস্তুটা নেই, তাদের আগের কর্মস্থলে এর ছড়াছড়ি ছিল।
এই গল্পটা আমার ডিপার্টমেন্টের এক ছোট ভাইয়ের মুখে শোনা। আমাদের ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের প্রত্যেক টিচারই অনেক সিনিয়র। আর সিনিয়র টিচাররা কেন যেন মেয়েদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট থাকেন। (একান্তই আমার নিজস্ব অভিমত। আমার ধারনা তারা নিজেদের বেগম রোকেয়ার টাইমের মনে করেন আর মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় আসলে খুব খুশি হন।)। আবার প্রত্যেক সিনিয়র টিচারের ক্লাসেই কিভাবে যেন একটা মেয়ে থাকে বেস্ট স্টুডেন্ট।
তো ধরি মেয়েটির নাম মেহজাবিন (এই নামের কেউ মাইন্ড খাইয়েন না)। সে ম্যাথ ৩ ক্লাসের সেরা স্টুডেন্ট। স্যর তার নামে অজ্ঞান। কিছু হলেই, "মা বলতো, এটা কি?", "মেহজাবিন, বলতো ও কি ঠিক বলেছে?", "মা কাল কিন্তু তোমাদের কুইজ নিব।" কিংবা অন্যদের কে "এটা পারো নাই??? মেহজাবিন, মা, ওদের একটু দেখিয়ে দাও"। পুরো ক্লাস এই মেহজাবিনকে শত্রু হিসেবেই গণ্য করা শুরু করল কয়েকদিনের মাথায়।
ঐ স্যরের একটা স্বভাব ছিল, উনি নতুন কিছু ক্লাসে পড়ালে, শেষ হবার সাথে সাথেই তার পরীক্ষা নিতেন। তো এমনই এক দিন উনি ক্লাস নিয়েছেন এক ধরনের গ্রাফ নিয়ে। সবশেষে, পরীক্ষা নেয়া শুরু। বিশাল একটা অঙ্ক দিয়ে বললেন "ড্র দিস গ্রাফ"।
পুরো ক্লাস ব্যস্ত গ্রাফ আঁকায়। মেহজাবিন কোন কারণে সেইদিন ক্যালকুলেটর আনতে ভুলে গিয়েছিল। তাই ওর অনেক সময় লাগছিল আঁকতে। এদিকে ক্লাস প্রায় শেষ, স্যর অনেক অধৈর্য হয়ে গেছেন। মেহজাবিন কি আজ পারবে না!! এটা কি হয়!!! এদিকে মেহজাবিন তখন অঙ্ক করা শেষ করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে ক্যালকুলেটরের জন্য।
স্যর ভাবলেন শেষ। তো উনি জিগ্যেস করলেন, "মেহজাবিন, ইজ ইয়োর ফিগার কমপ্লিট??"।
মেহজাবিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে আর ফাজিল পোলারা এই কথার ভিন্ন অর্থ বের করে মজা নেবার চেস্টা করছে।
স্যর কি বুঝলেন কি জানে, বললেন, - "ডোন্ট ফিল শাই, শো আস ইয়োর ফিগার।"
এইবার,... পুরো ক্লাসের দাঁত বের হয়ে পরেছে ...
মেহজাবিন তখন প্রায় কাঁদো কাঁদো, কিন্তু স্যর নাছোড়বান্দা - "মেহজাবিন, মে বি ইয়োর ফিগার ইজ নট কমপ্লিট, বাট ইউ ক্যান শো আস হোয়াট ফিগার ইউ মে হ্যাভ গট, নো শেম ইন দিস। প্লিজ শো আস ইয়োর ফিগার"।
এইবার পুরো ক্লাস অট্টহাসিতে, ফেটে যায় যায় অবস্থা, আর মেহজাবিনকে বাঁচিয়ে দিতেই মনে হয় ক্লাস শেষের ঘণ্টা বেজে উঠল।
স্যর তার ছাত্রদের এহেন বেয়াদবিতে খুবই বিরক্ত এবং একই সাথে মেহজাবিন পারে নাই তাই খুব দুঃখিত। তাই উনি ঘোষণা দিলেন,
"ওকে, দিস উইল বি ইয়োর এসাইনমেন্ট ফর টুমরো। মেহজাবিন, আই ডিড নট এক্সপেক্ট, ইউ ক্যান নট কমপ্লিট দিস। সো, টুমরো, আই উইল চেক ইয়োর ফিগার ফার্স্ট।"
এবং এই রায় দিয়ে উনি ভরা মজলিস থুক্কু ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলেন।

No comments:

Post a Comment