Skip to main content

কিছু জরুরী বিষয়ে ফালতু কথা...


যখন ছোট ছিলাম, একটা কথা প্রায়ই শুনতাম, "মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই"। ইদানীং দেখছি, কিছু মানুষ আরেকটা কথা চালু করছে "নাস্তিক নাস্তিক ভাই ভাই"। কেমন যেন সিমিলার টাইপ কথা !!!

আমার গলা আজন্ম নিচু ছিল। মাঝে মধ্যে তবু বড় গলায় কয়েকটা কথা বলে ফেলেছি। কিছু মানুষের সেই আবোল-তাবোল কথা ভালো লেগে গেছে, এখন, তাদের সাথে কথাবার্তা চলে। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখি, আমার ফ্রেন্ড-লিস্টে পুরা ৫০১ জন মানুষ!!! এদের অনেকের নামেই দেখি "Atheist", "নাস্তিক" ইত্যাদি অনুসর্গ-উপসর্গ যোগ করা। তারা আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন, এটা জেনে যে আমি ধর্মে বিশ্বাস করি না। ভাই বলেও ডাকেন। কেমন যেন "নাস্তিক নাস্তিক ভাই ভাই" টাইপ লাগে।

অনেকে আবার ঘোষণা দিয়ে মুসলমান থেকে নাস্তিক হয়ে যান এবং তা প্রমাণ করতে, ঘোষণা দিয়ে শুকরের মাংস খান। তাদের বক্তব্য, সৃষ্টির আদিযুগ হতে, মানুষকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করার জন্যই ধর্মের প্রবর্তন করা হয়েছে। ব্যাপারটা নিয়ে আমার নিজস্ব একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে, কিন্তু সেটা পরের বিষয়। তারচে কাছের বিষয় হল, বক্তব্যটির প্রথমাংশ- "সৃষ্টির আদি যুগ হতে"।



আমি ছোটখাটো মানুষ। আমার দৌড়-ও বেশিদূর না। তাই আমার পক্ষে সৃষ্টির আদি যুগের ইতিহাস বিচার করা খুবই কষ্টকর। তাই ছোট বেলার আর তার আগের বড়জোর দশ-বারো হাজার বছরের মধ্যেই আপাতত আমার ইতিহাস বিচারের দৌড়টা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

ছোটবেলায় পড়েছিলাম, "যে পুস্তক পাঠ করিলে কোন কিছু সম্পর্কে বিষদ রূপে জানা যায়, তাকে বিজ্ঞান বলে"।
বলা বাহুল্য, যা পড়েছিলাম সেটা ভুল ছিল। "নাস্তিক"- শব্দটি প্রথম দেখেছিলাম, বাংলা ব্যাকরণ বইতে।

ঈশ্বরে বিশ্বাস করে যে - আস্তিক
ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না যে - নাস্তিক

এমন আরও অনেক কিছুই পড়তে হয়েছিল, মুখস্থ করতে হয়েছিল। এখন জানি - এই কথা দুটিও ভুল। "নাস্তিক" শব্দটি ভাঙ্গলে হয়, "ন-অস্তি"। প্রায় সকলেই সেটা জানে। কিন্তু অর্থ হিসেবে জানে, "ন"-মনে "না"। "অস্তি"-মানে অস্তিত্ব। কিন্তু কিসের অস্তিত্ব সেটা মনে হয় খুব কম লোকেই জানে।

আমাদের এই ভারতবর্ষে, বিজ্ঞান কেমন ছিল তা সম্পর্কে আমার ধারনা নেই, কিন্তু এটা জানি, এখানকার দর্শন - সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখনকার যে হিন্দুধর্ম তা সেই দার্শনিক মানুষদের ভাবনারই বিকৃত/পরিবর্তিত রূপ। তবে এই ভাবনাগুলোর একটা বড় অংশ এসেছে বেদ থেকে। বেদ ধর্ম-গ্রন্থ হিসেবে কেমন তা আমার আলোচ্য বিষয় না। বেদ আসলে একটা দর্শন গ্রন্থ। এটা আমি ভালোভাবে বুঝেছি এক আড্ডায় রণ-দার কাছ থেকে। যাই হোক, সেই সময় যে বেদই একমাত্র দর্শন ছিল, তা কিন্তু না। আরও অনেক দর্শনের অস্তিত্ব তখন ছিল। কিছু বেদ-এর থেকে ডিরাইভড, তারা প্রথমেই বেদবাক্য মানেই সত্য ধরে নিয়ে বাকি প্রমাণে যেত। আর কিছু দর্শন সেটা মানতে পারে নাই, তারা বেদ যে একটা পরম সত্য সেটা না মেনেই ভিন্ন পন্থায় প্রমাণে যেত।

তাই, তখনকার দর্শন-গুলোকে মূলতঃ দুই ভাগে ভাগ করা যায়। "বেদ স্বীকার করে যারা" আর "বেদ স্বীকার করে না যারা"।
অথবা বলা যায় "বেদের অস্তিত্ব/অস্তিত্বের পরমত্ব স্বীকার করে যারা" এবং "বেদের অস্তিত্ব/অস্তিত্বের পরমত্ব স্বীকার করে না যারা"।
এরাই হল আস্তিক আর নাস্তিক। আর "ন-অস্তি"-র সেই অস্তিত্ব হল, "বেদ"-এর অস্তিত্ব।

তো আমার হিসেব মতে, এখনকার মুসলিমরাও সেই হিসেবে "নাস্তিক"। সেটা প্রমাণের জন্য তারা নামাজ পড়ে, কোরবানি দেয়, পথে দেখা হলে সালাম দেয়, ইসলামের বিরুদ্ধে টু-শব্দটি করলেও টুটি চেপে ধরতে আসে। আর কেউ কেউ নাস্তিক সেটা প্রমাণ করতে ঘোষণা দিয়ে শুকরের মাংস খায়, মদ্যপান করে; অথবা কেউ কেউ ঘোষণা দিয়ে গরু ভক্ষণ করে। কেমন যেন সিমিলার !!!

আমার ভাই কাউকে কিছু প্রমাণ করার ঠেকা নাই। আমি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা মানুষ না। আমি একটা বিষয় বিশ্বাস করি না, সেটা আবার প্রমাণ করার কি আছে?  আমি কে, আমি কেমন সেটা নিজের কাছে পরিষ্কার থাকলেই চলে, আড়ম্বর করে সেটা ঘোষণা দিয়ে বেড়ানোকে আমার কাছে মনে হয় আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা। আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা কিছু মানুষ নিয়ে আমার একটা লিখা আছে, "প্রতিবাদ । পড়তে পারেন।

এখন কেউ যদি, আমি নাস্তিক, শুধু মাত্র এই কথা ভেবেই আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে থাকেন, তবে তাদের বলছি, মাঝে মাঝে আমার কথা আপনাদের খারাপ লাগবে। আমার কিছু করার নেই। আমি ধর্মে বিশ্বাস করি না বলে আপনার সমমনা ভেবে বসবেন না। আমার সাথে নন-প্রাকটিসিং মুসলিমদের মিলই বেশি পাবেন। ধর্মবিশ্বাস আমার জীবনের ক্ষুদ্রতম বিষয়গুলোর একটি। বাকি শত-সহস্র বিশাল বড় বড় বিষয়ে আপনার সাথে আমার অমিল থাকতে পারে। আমি তেমন কোন বড়সর মানবতাবাদীও না। আমি খুব সাধারন একজন মানুষ, যার শত সহস্র দোষ-ত্রুটি আছে, যে স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে; আর যার স্বপ্নগুলো খুব অর্বাচীন। আমাকে বরং একজন অর্বাচীন স্বাপ্নিক ভাবলেই খুশি হব।

Comments

Popular posts from this blog

দুঃসময় বা দুঃস্বপ্নের সময়...

কেন যেন মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্ন দেখছি, আর প্রচন্ড অসহায় হয়ে চাচ্ছি, কেউ আমার ঘুমটা এক ঝটকায় ভেঙ্গে দিক। দুঃস্বপ্নের শুরু মায়ের অসুস্থতা দিয়ে। এখান ওখান করে শেষ পর্যন্ত কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৌছালাম, ইমারজেন্সি-তে ওদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতেই মেইল এল, আম্মার COVID-19 পজিটিভ। সব ভয় ভুলে, চলে গেলাম রোগি ভরা ওয়ার্ডে, বেডে শুইয়ে দিলাম, ডায়ালাইসিস করে দিলাম। চলে আসার সময়, একবার মনে হল, এর পর আর দেখা হবে না। দু'দিন পর, ICU তে যায়গা পাওয়ায়, একটু নিশ্চিন্তে অফিসের একটা মিটিং এ জয়েন করলাম। মাঝামাঝি সময় ফোন এল, আম্মু সব চিকিৎসার বাইরে চলে গেছে, আম্মুকে নিয়ে আসতে হবে। সেদিন সেপ্টেম্বরের ৩০, ২০২০। ঈদের আর দুদিন বাকি। পরদিন বানানি কবরস্থানে মাটি চাপা দিলাম। সেই সময় প্রচন্ড বৃষ্টি, আগের দিন থেকেই স্বাভাবিকভাবেই চলছিলাম, কিন্তু কেন যেন এখন আর পারলাম না, সকল আত্মসংযমের বাধ ভেঙ্গে চুরে, বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে কান্না এল।  বৃষ্টির পানি, মুখের মাস্ক, পিপিই সব মিলে সেই চোখের পানি লুকিয়েই ছিল হয়তো, খেয়াল করা হয়নি। বা সেই অবস্থায় ও ছিলাম না।  এর পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন, বাসার সবার। এর মাঝেই বাবার পাতলা পায়খা...

জেনারেশন গ্যাপ

জেনারেশন এ পরিবর্তন আসে অবশ্যম্ভাবী হয়ে। এর কোন ব্যতিক্রম নাই। কেউ চাক বা না চাক এই প্রক্রিয়া চলবেই। ভাল লাগুক বা মন্দ লাগুক কেউ সময় কে থামাতে পারবে না। এর মধ্যে বিতর্ক এসে যায় ভাল পরিবর্তন আর মূল্যবোধের নিম্নগামীতা নিয়ে। কিন্তু আমি সেসব নিয়েও কথা বলছি না। আমি বলছি কারণ যুগে যুগে সব মানুষের অপ্ত বাক্য ‘ দুনিয়াটা রসাতলে গেল ’। আমার দাদা আমার দাদী কে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং তার মৃত্যুশোকে সন্ন্যাসী হন। তিনি তখন অবশ্য ছিলেন যুব-সমাজ রসাতলে যাবার অন্যতম উদাহরণ। এখন অবিশ্বাস্য লাগতেই পারে কিন্তু তখন কেউ তাকে ছেড়ে কথা বলেনি। আমার বাবা রবীন্দ্র সঙ্গীত এর ভীষণ ভক্ত ছিল কিন্তু তার সময় এটা ছিল সঙ্গীত এর নামে অশ্লীলতা। আব্বুকেও সিনেমা হলে সিনেমা দেখাতে যাবার জন্য অসংখ্যবার শুনতে হয়েছে যুব-সমাজ রসাতলে গেল। এসব সিনেমা কে এখন আমরা আর্ট পিস এর সম্মান দেই। এখন সবার গা-জ্বালা করা একটা সর্বনাম হল ডিজুস জেনারেশন বা আধুনিক ইয়ো পোলাপান। সবার মত অনুযায়ী তাদের কোন শেকড়ই নাই এবং এরা অন্ধভাবে পশ্চিমা সভ্যতা অনুকরণ ও অনুসরণ করে। কিন্তু সময় যখন সব বদলায় তখন সময় এর সাথে যুদ্ধ করা; আমি ঠিক কিন্...

Personal notes on my Transition form Windows to Linux - Part 1 : Prolouge

Deciding to move to Open-source/Free software and Linux for everyday task is not a small decision. Especially when living in Bangladesh where almost 80% of the people still uses ASCII font based system for typing Bangla language, paying for software is a very remote idea which happens to only to the “Other people”.