Thursday, October 25, 2012

কিছু জরুরী বিষয়ে ফালতু কথা...


যখন ছোট ছিলাম, একটা কথা প্রায়ই শুনতাম, "মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই"। ইদানীং দেখছি, কিছু মানুষ আরেকটা কথা চালু করছে "নাস্তিক নাস্তিক ভাই ভাই"। কেমন যেন সিমিলার টাইপ কথা !!!

আমার গলা আজন্ম নিচু ছিল। মাঝে মধ্যে তবু বড় গলায় কয়েকটা কথা বলে ফেলেছি। কিছু মানুষের সেই আবোল-তাবোল কথা ভালো লেগে গেছে, এখন, তাদের সাথে কথাবার্তা চলে। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখি, আমার ফ্রেন্ড-লিস্টে পুরা ৫০১ জন মানুষ!!! এদের অনেকের নামেই দেখি "Atheist", "নাস্তিক" ইত্যাদি অনুসর্গ-উপসর্গ যোগ করা। তারা আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন, এটা জেনে যে আমি ধর্মে বিশ্বাস করি না। ভাই বলেও ডাকেন। কেমন যেন "নাস্তিক নাস্তিক ভাই ভাই" টাইপ লাগে।

অনেকে আবার ঘোষণা দিয়ে মুসলমান থেকে নাস্তিক হয়ে যান এবং তা প্রমাণ করতে, ঘোষণা দিয়ে শুকরের মাংস খান। তাদের বক্তব্য, সৃষ্টির আদিযুগ হতে, মানুষকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করার জন্যই ধর্মের প্রবর্তন করা হয়েছে। ব্যাপারটা নিয়ে আমার নিজস্ব একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে, কিন্তু সেটা পরের বিষয়। তারচে কাছের বিষয় হল, বক্তব্যটির প্রথমাংশ- "সৃষ্টির আদি যুগ হতে"।



আমি ছোটখাটো মানুষ। আমার দৌড়-ও বেশিদূর না। তাই আমার পক্ষে সৃষ্টির আদি যুগের ইতিহাস বিচার করা খুবই কষ্টকর। তাই ছোট বেলার আর তার আগের বড়জোর দশ-বারো হাজার বছরের মধ্যেই আপাতত আমার ইতিহাস বিচারের দৌড়টা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

ছোটবেলায় পড়েছিলাম, "যে পুস্তক পাঠ করিলে কোন কিছু সম্পর্কে বিষদ রূপে জানা যায়, তাকে বিজ্ঞান বলে"।
বলা বাহুল্য, যা পড়েছিলাম সেটা ভুল ছিল। "নাস্তিক"- শব্দটি প্রথম দেখেছিলাম, বাংলা ব্যাকরণ বইতে।

ঈশ্বরে বিশ্বাস করে যে - আস্তিক
ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না যে - নাস্তিক

এমন আরও অনেক কিছুই পড়তে হয়েছিল, মুখস্থ করতে হয়েছিল। এখন জানি - এই কথা দুটিও ভুল। "নাস্তিক" শব্দটি ভাঙ্গলে হয়, "ন-অস্তি"। প্রায় সকলেই সেটা জানে। কিন্তু অর্থ হিসেবে জানে, "ন"-মনে "না"। "অস্তি"-মানে অস্তিত্ব। কিন্তু কিসের অস্তিত্ব সেটা মনে হয় খুব কম লোকেই জানে।

আমাদের এই ভারতবর্ষে, বিজ্ঞান কেমন ছিল তা সম্পর্কে আমার ধারনা নেই, কিন্তু এটা জানি, এখানকার দর্শন - সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখনকার যে হিন্দুধর্ম তা সেই দার্শনিক মানুষদের ভাবনারই বিকৃত/পরিবর্তিত রূপ। তবে এই ভাবনাগুলোর একটা বড় অংশ এসেছে বেদ থেকে। বেদ ধর্ম-গ্রন্থ হিসেবে কেমন তা আমার আলোচ্য বিষয় না। বেদ আসলে একটা দর্শন গ্রন্থ। এটা আমি ভালোভাবে বুঝেছি এক আড্ডায় রণ-দার কাছ থেকে। যাই হোক, সেই সময় যে বেদই একমাত্র দর্শন ছিল, তা কিন্তু না। আরও অনেক দর্শনের অস্তিত্ব তখন ছিল। কিছু বেদ-এর থেকে ডিরাইভড, তারা প্রথমেই বেদবাক্য মানেই সত্য ধরে নিয়ে বাকি প্রমাণে যেত। আর কিছু দর্শন সেটা মানতে পারে নাই, তারা বেদ যে একটা পরম সত্য সেটা না মেনেই ভিন্ন পন্থায় প্রমাণে যেত।

তাই, তখনকার দর্শন-গুলোকে মূলতঃ দুই ভাগে ভাগ করা যায়। "বেদ স্বীকার করে যারা" আর "বেদ স্বীকার করে না যারা"।
অথবা বলা যায় "বেদের অস্তিত্ব/অস্তিত্বের পরমত্ব স্বীকার করে যারা" এবং "বেদের অস্তিত্ব/অস্তিত্বের পরমত্ব স্বীকার করে না যারা"।
এরাই হল আস্তিক আর নাস্তিক। আর "ন-অস্তি"-র সেই অস্তিত্ব হল, "বেদ"-এর অস্তিত্ব।

তো আমার হিসেব মতে, এখনকার মুসলিমরাও সেই হিসেবে "নাস্তিক"। সেটা প্রমাণের জন্য তারা নামাজ পড়ে, কোরবানি দেয়, পথে দেখা হলে সালাম দেয়, ইসলামের বিরুদ্ধে টু-শব্দটি করলেও টুটি চেপে ধরতে আসে। আর কেউ কেউ নাস্তিক সেটা প্রমাণ করতে ঘোষণা দিয়ে শুকরের মাংস খায়, মদ্যপান করে; অথবা কেউ কেউ ঘোষণা দিয়ে গরু ভক্ষণ করে। কেমন যেন সিমিলার !!!

আমার ভাই কাউকে কিছু প্রমাণ করার ঠেকা নাই। আমি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা মানুষ না। আমি একটা বিষয় বিশ্বাস করি না, সেটা আবার প্রমাণ করার কি আছে?  আমি কে, আমি কেমন সেটা নিজের কাছে পরিষ্কার থাকলেই চলে, আড়ম্বর করে সেটা ঘোষণা দিয়ে বেড়ানোকে আমার কাছে মনে হয় আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা। আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা কিছু মানুষ নিয়ে আমার একটা লিখা আছে, "প্রতিবাদ । পড়তে পারেন।

এখন কেউ যদি, আমি নাস্তিক, শুধু মাত্র এই কথা ভেবেই আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে থাকেন, তবে তাদের বলছি, মাঝে মাঝে আমার কথা আপনাদের খারাপ লাগবে। আমার কিছু করার নেই। আমি ধর্মে বিশ্বাস করি না বলে আপনার সমমনা ভেবে বসবেন না। আমার সাথে নন-প্রাকটিসিং মুসলিমদের মিলই বেশি পাবেন। ধর্মবিশ্বাস আমার জীবনের ক্ষুদ্রতম বিষয়গুলোর একটি। বাকি শত-সহস্র বিশাল বড় বড় বিষয়ে আপনার সাথে আমার অমিল থাকতে পারে। আমি তেমন কোন বড়সর মানবতাবাদীও না। আমি খুব সাধারন একজন মানুষ, যার শত সহস্র দোষ-ত্রুটি আছে, যে স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে; আর যার স্বপ্নগুলো খুব অর্বাচীন। আমাকে বরং একজন অর্বাচীন স্বাপ্নিক ভাবলেই খুশি হব।

No comments:

Post a Comment