Skip to main content

কোরবানি ও ঈদ...

আমি যখন অনেক ছোট, হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখলাম, বাসায় ঢোকার পথে একটা বিশাল ভয়াল দর্শন গরু দাড়িয়ে আছে। তাও আবার গোল্ডেন-ব্রাউন আর কালোর ডোরাকাটা। আর বাড়ির কিছু লোক উৎসাহ নিয়ে ওটা ঘিরে দড়িয়ে আছে। ভয়ে আমি বাসায় ঢুকতে পারছি না। কেউ একজন অভয় দিল, "কিচ্ছু বলবে না, আসো..."

আমি যেই ঢুকতে গেলাম, গরুটা গলা বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। আমি চিৎকার দিয়ে তিন লাফে গেটের বাইরে। তখন কারো দয়া হল, আমাকে কোলে নিয়ে পার
 করে দিতে এল। আবারও একই ঘটনা। কিন্তু সে মোটেও ভয় না পায়ে আমাকে বরং গরুর দিকে এগিয়ে দিচ্ছে, আমি ভায়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে আছি। সে বলল, "আদর করে দাও"।
আমি যতোই ভয় পাই, তিনি নাছোড়বান্দা। শেষে আমার হাত টেনে নিয়ে গরুর গলার তলে বুলিয়ে দিলেন।
ওমা, এ দেখি কিছুই বলে না, বরং আরামে চোখ বুজে ফেলল!!!

সেই শুরু, তারপর আমি প্রতিদিন খেলা বাদ দিয়ে আগে আগে বাসায় পৌছে সেই গরুর সাথেই সময় কাটাতাম। ১৫-২০ দিন আগেই কেনা হয়েছিল গরুটা। যাই হোক, কোরবানির ঈদ এল, আমার কান্না আর চিৎকারে কর্নপাত না করে সেটাকে কোরবানি দেয়া হল। সেই দিন আব্বা বেশ ধমক দিয়ে আমাকে বাধ্য করলেন ঐ কোরবানি করা গরুর পিছনে দাড়িয়ে ছবি তুলতে। ছবিটা এখনো আছে। কেউ বেড়াতে আসলে আমার মা সেই গল্পটা বলে ছবিটা দেখায়। তারাও আগ্রহ নিয়ে দেখে। শুধু দেখে না, সেই ছবিতে আমার চোখে পানি জমে আছে।

এরপর থেকে আমি আর কোরবানি সহ্য করতে পারি না। জবাই করার সময়টা বাসায় পড়ে থাকি এখনও। শেষ দুপুর বা বিকালের দিকে বের হই, যখন, সব কিছু পরিষ্কার করা প্রায় শেষ।

মাংসের গায়ে হলুদ লবন মেখে, গুনার তারে গেথে আমার নানী বেশ অনেকগুলো বড় বড় মালা বানাতেন। আর সেই মালা প্রতিদিন ছাদ আর বারান্দার গ্রীলে রোদ দেয়া হত। আর কি কি প্রসেসিং চালাতেন উনি তা জানি না, কিন্তু, প্রায় ৫-৬ মাস পরেও হঠাৎ কোন দিন; কোন এক ডানোর কৌটা থেকে উনি কিছু পাথরের মত শক্ত বস্তু বের করে বলতেন, "আজকে কোরবানি মাংসটা রান্না করব।"

অসাধারন সেই স্বাদ...

নানী বেশ অসুস্থ, এখন ঢাকাতেই থাকছেন। আমার মা-ও অসুস্থ হওয়া শুরু করেছেন। আর আমি সেই শক্ত বস্তুটির স্বাদ পাইনা ৮-৯ বছর... মিস করি...

Popular posts from this blog

দুঃসময় বা দুঃস্বপ্নের সময়...

কেন যেন মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্ন দেখছি, আর প্রচন্ড অসহায় হয়ে চাচ্ছি, কেউ আমার ঘুমটা এক ঝটকায় ভেঙ্গে দিক। দুঃস্বপ্নের শুরু মায়ের অসুস্থতা দিয়ে। এখান ওখান করে শেষ পর্যন্ত কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৌছালাম, ইমারজেন্সি-তে ওদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতেই মেইল এল, আম্মার COVID-19 পজিটিভ। সব ভয় ভুলে, চলে গেলাম রোগি ভরা ওয়ার্ডে, বেডে শুইয়ে দিলাম, ডায়ালাইসিস করে দিলাম। চলে আসার সময়, একবার মনে হল, এর পর আর দেখা হবে না। দু'দিন পর, ICU তে যায়গা পাওয়ায়, একটু নিশ্চিন্তে অফিসের একটা মিটিং এ জয়েন করলাম। মাঝামাঝি সময় ফোন এল, আম্মু সব চিকিৎসার বাইরে চলে গেছে, আম্মুকে নিয়ে আসতে হবে। সেদিন সেপ্টেম্বরের ৩০, ২০২০। ঈদের আর দুদিন বাকি। পরদিন বানানি কবরস্থানে মাটি চাপা দিলাম। সেই সময় প্রচন্ড বৃষ্টি, আগের দিন থেকেই স্বাভাবিকভাবেই চলছিলাম, কিন্তু কেন যেন এখন আর পারলাম না, সকল আত্মসংযমের বাধ ভেঙ্গে চুরে, বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে কান্না এল।  বৃষ্টির পানি, মুখের মাস্ক, পিপিই সব মিলে সেই চোখের পানি লুকিয়েই ছিল হয়তো, খেয়াল করা হয়নি। বা সেই অবস্থায় ও ছিলাম না।  এর পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন, বাসার সবার। এর মাঝেই বাবার পাতলা পায়খা...

জেনারেশন গ্যাপ

জেনারেশন এ পরিবর্তন আসে অবশ্যম্ভাবী হয়ে। এর কোন ব্যতিক্রম নাই। কেউ চাক বা না চাক এই প্রক্রিয়া চলবেই। ভাল লাগুক বা মন্দ লাগুক কেউ সময় কে থামাতে পারবে না। এর মধ্যে বিতর্ক এসে যায় ভাল পরিবর্তন আর মূল্যবোধের নিম্নগামীতা নিয়ে। কিন্তু আমি সেসব নিয়েও কথা বলছি না। আমি বলছি কারণ যুগে যুগে সব মানুষের অপ্ত বাক্য ‘ দুনিয়াটা রসাতলে গেল ’। আমার দাদা আমার দাদী কে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং তার মৃত্যুশোকে সন্ন্যাসী হন। তিনি তখন অবশ্য ছিলেন যুব-সমাজ রসাতলে যাবার অন্যতম উদাহরণ। এখন অবিশ্বাস্য লাগতেই পারে কিন্তু তখন কেউ তাকে ছেড়ে কথা বলেনি। আমার বাবা রবীন্দ্র সঙ্গীত এর ভীষণ ভক্ত ছিল কিন্তু তার সময় এটা ছিল সঙ্গীত এর নামে অশ্লীলতা। আব্বুকেও সিনেমা হলে সিনেমা দেখাতে যাবার জন্য অসংখ্যবার শুনতে হয়েছে যুব-সমাজ রসাতলে গেল। এসব সিনেমা কে এখন আমরা আর্ট পিস এর সম্মান দেই। এখন সবার গা-জ্বালা করা একটা সর্বনাম হল ডিজুস জেনারেশন বা আধুনিক ইয়ো পোলাপান। সবার মত অনুযায়ী তাদের কোন শেকড়ই নাই এবং এরা অন্ধভাবে পশ্চিমা সভ্যতা অনুকরণ ও অনুসরণ করে। কিন্তু সময় যখন সব বদলায় তখন সময় এর সাথে যুদ্ধ করা; আমি ঠিক কিন্...

Personal notes on my Transition form Windows to Linux - Part 1 : Prolouge

Deciding to move to Open-source/Free software and Linux for everyday task is not a small decision. Especially when living in Bangladesh where almost 80% of the people still uses ASCII font based system for typing Bangla language, paying for software is a very remote idea which happens to only to the “Other people”.