Thursday, October 25, 2012

কোরবানি ও ঈদ...

আমি যখন অনেক ছোট, হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখলাম, বাসায় ঢোকার পথে একটা বিশাল ভয়াল দর্শন গরু দাড়িয়ে আছে। তাও আবার গোল্ডেন-ব্রাউন আর কালোর ডোরাকাটা। আর বাড়ির কিছু লোক উৎসাহ নিয়ে ওটা ঘিরে দড়িয়ে আছে। ভয়ে আমি বাসায় ঢুকতে পারছি না। কেউ একজন অভয় দিল, "কিচ্ছু বলবে না, আসো..."

আমি যেই ঢুকতে গেলাম, গরুটা গলা বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। আমি চিৎকার দিয়ে তিন লাফে গেটের বাইরে। তখন কারো দয়া হল, আমাকে কোলে নিয়ে পার
 করে দিতে এল। আবারও একই ঘটনা। কিন্তু সে মোটেও ভয় না পায়ে আমাকে বরং গরুর দিকে এগিয়ে দিচ্ছে, আমি ভায়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে আছি। সে বলল, "আদর করে দাও"।
আমি যতোই ভয় পাই, তিনি নাছোড়বান্দা। শেষে আমার হাত টেনে নিয়ে গরুর গলার তলে বুলিয়ে দিলেন।
ওমা, এ দেখি কিছুই বলে না, বরং আরামে চোখ বুজে ফেলল!!!

সেই শুরু, তারপর আমি প্রতিদিন খেলা বাদ দিয়ে আগে আগে বাসায় পৌছে সেই গরুর সাথেই সময় কাটাতাম। ১৫-২০ দিন আগেই কেনা হয়েছিল গরুটা। যাই হোক, কোরবানির ঈদ এল, আমার কান্না আর চিৎকারে কর্নপাত না করে সেটাকে কোরবানি দেয়া হল। সেই দিন আব্বা বেশ ধমক দিয়ে আমাকে বাধ্য করলেন ঐ কোরবানি করা গরুর পিছনে দাড়িয়ে ছবি তুলতে। ছবিটা এখনো আছে। কেউ বেড়াতে আসলে আমার মা সেই গল্পটা বলে ছবিটা দেখায়। তারাও আগ্রহ নিয়ে দেখে। শুধু দেখে না, সেই ছবিতে আমার চোখে পানি জমে আছে।

এরপর থেকে আমি আর কোরবানি সহ্য করতে পারি না। জবাই করার সময়টা বাসায় পড়ে থাকি এখনও। শেষ দুপুর বা বিকালের দিকে বের হই, যখন, সব কিছু পরিষ্কার করা প্রায় শেষ।

মাংসের গায়ে হলুদ লবন মেখে, গুনার তারে গেথে আমার নানী বেশ অনেকগুলো বড় বড় মালা বানাতেন। আর সেই মালা প্রতিদিন ছাদ আর বারান্দার গ্রীলে রোদ দেয়া হত। আর কি কি প্রসেসিং চালাতেন উনি তা জানি না, কিন্তু, প্রায় ৫-৬ মাস পরেও হঠাৎ কোন দিন; কোন এক ডানোর কৌটা থেকে উনি কিছু পাথরের মত শক্ত বস্তু বের করে বলতেন, "আজকে কোরবানি মাংসটা রান্না করব।"

অসাধারন সেই স্বাদ...

নানী বেশ অসুস্থ, এখন ঢাকাতেই থাকছেন। আমার মা-ও অসুস্থ হওয়া শুরু করেছেন। আর আমি সেই শক্ত বস্তুটির স্বাদ পাইনা ৮-৯ বছর... মিস করি...