Monday, May 26, 2014

স্বর্ণপ্রহর

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে যাওয়া। গোসলের আগে দ্রুত শেভ করে চুলটাও সেই ফাঁকে একটু গুছিয়ে নেয়া। একেবারে পরিপাটি হয়ে নাস্তার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ শুরু। 

সকালের তপ্ত রোদে অপেক্ষা সহসাই শীতল হওয়া আকাশী রঙের দেখা পেয়ে। এরপরে খুনসুটি চলতে থাকে রোদ-ছায়া আর মেঘলা-হওয়ায়। ভাগ্য বলে সত্যিই কিছু আছে নাকি স্রেফ ভ্রম, এটা ভেবে শেষ করার আগেই, ভাগ্যদেবী আবারও চমকে দেন, না পাওয়াটা পাইয়ে দিয়ে। চিনি মাখা রুটির তালগোলে কেটে যায় আরও কিছুটা সময়।

তিন চাকার ঘূর্ণনে পৌঁছে যাওয়া আরও এক দফা অপেক্ষার সামনে। পোড়া-মুখে আফসোস হয়, চোখে চোখে মেপে নেয়া দৃষ্টির যুদ্ধ চলে, আর, হাতির রোগা-পটকা সাথীর সাথে চলতে থাকে অনুযোগ। এভাবেই লেইস-ফিতা আর জলে ভাসা সাবান ছাড়িয়ে নিয়ে যায় বিদায়ের লগ্ন। 

খোলা হাওয়ায় দীঘল চুলের পাল উড়িয়ে ভেসে চলা এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত। সিক্ত হবার ভয়ে সাবধানী হাতে ভাঙ্গে কাচের টুকরো। দুমড়ানো পলিথিনে, ভালো লাগা মুহূর্তগুলোকে আরও একটু দীর্ঘায়ু করার আকুতি জানান দেয়।

পাগলামি, চুরি করে গায়ে মাখা, বৃষ্টির আদর। পাশাপাশি, তিন চাকা কেবল ঘুরতেই থাকে। সেই সাথে অবাক চোখে বৃষ্টির খেলা দেখা, দেখা আকাশী হাসি। ভেজা বর্ষায় ভেজা হাত ছুঁয়ে দেবার প্রবল বাসনা চাপা পরতে থাকে সংকোচের আড়ালে। চরকির পাক থামলে, খুনসুটি চলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে বিরক্তি নিয়ে। এক ফাঁকে, দুরের আলাপনে প্রিয় মানুষ দেখা, দেখানোর ষড়যন্ত্র ধূলিসাৎ হলেও ভাটা পরে না উপভোগ্যের আগমনীতে। সেই সাথে হাটাহাটি পাশাপাশি। বোঝার ভার হাল্কা হতেই দে ছুট, দে ছুট... 

বেগুনী পাপড়ির ছোঁয়া নেয় নরম হাত আর ঠোট ছুঁয়ে দেয়া ধোয়া উঠা চা। সহস্র ছবি তুলে নেয়া মনের ক্যামেরায়, হাজার ভঙ্গি আর হাজার কোন থেকে। কল্পনাতে এভাবেই পার হোক হাজার বছর। তবু, চঞ্চলতার চপলতায় সেই ক্ষণেও নাড়া লাগে। ভিজে যাওয়া নীলচে শীতলতা কাটে অব-লাল পরশে।

দুর হতে জলাধারে জলের খেলা দেখা বিষণ্ণ আকাশী মুহূর্তটাকে মনে হতে থাকে সোনালী সময়। ফিরে পেতে এমন ক্ষণ হাজার বার বুক বাধে মন আবারো আশায়। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই বাধিয়ে রাখা যায় এই উপলব্ধিটাই বড় হয়ে উঠে। এমন দিনে মনে হতে থকে, জীবন আসলেই সুন্দর। এরপরে ধোয়া ওঠা বকুলের ঘ্রাণ, মাতাল পাগল করা। ফিরে যাবার কথাটাতেও কষ্টের ছাপ থাকে না আর। বরং, নিশ্চিত ভাঙ্গনের আশংকা কেটে যায়, অচেনা মুহূর্তগুলোকে ফ্রেমে বেধে ফেলে। সুখ নিয়ে কাঁধে নেয়া আবার বোঝা, ফেরার সময় হল। বুকের কাটাটাও ফিরিয়ে দিতে হয়, আনমনে রয়ে যায় ইস্পাতের পাতখানি, অগোচরেই। 

চাকা আবারও ঘুরতে থাকে। বিদায় বলাটাও সুন্দর হতে পারে, সেই সম্ভাবনা বুকেই লুকিয়ে থাকে। বিকেল গড়িয়ে যায়। এরচেয়ে বেশি হলে, উপচে পরতেই পারে। তবু আবারও এমন দিন আসবেই, আসবে। আশা আছে, আছে বিশ্বাস, পুরোটাই। তাই, বিদায় বলাটাও সুন্দর হতে পারে। ফিরে যাওয়া একই পথে। বিকেলের শেষ। 
আনমনে গেয়ে ওঠা গানটাকে কেন যেন খুবই পরিচিত মনে হতে থাকে। এ তো আমারই কথা!!! ভর সন্ধ্যায়, একলা ফেরার পথে, অসম্ভব সুন্দর কিছু মুহূর্তের শেষে রেশ ধরে রাখে, মনের কোনে বাজতে থাকা গানটা - 

"...আমার সারাটা দিন,
মেঘলা আকাশ,
বৃষ্টি,
তোমাকে দিলাম।
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু
তোমার কাছে, চেয়ে নিলাম।..."

No comments:

Post a Comment