Skip to main content

ছোট্ট বাবুদের ফটোগ্রাফির সহজ পাঠ - ২

বাবুরা কেমন আছ?


গত পোস্টের কথা মনে আছে? ফটোগ্রাফির বেসিক টার্ম গুলা বলেছিলাম। আজ এগুলো দিবে কি হয়, কি করে তা বলব।  কিন্তু, ছোট্ট বাবুদের মনে রাখার সমস্যার কথা আমি জানি। তাই, নতুন একটা ট্যাব খুলে তাতে পুরানা পোস্ট টা ওপেন করে তবেই এই পোস্ট পড়া শুরু কর।

প্রথমে আসি আই,এস,ও,-তে।



আলো কম বা স্পিড বেশি এমন ছবি তুলতে বেশি আই,এস,ও, দরকার। উদাহারন স্বরুপ ফ্যাশনের পাখার ছবির কথা বলা যায়। যদি ফ্যাশনটা সেকেন্ডে ১০-১৫ বার ঘুরে, তাহলে সেটা যদি আই,এস,ও,১০০ দিয়ে তোলা হয়, ফ্যানের পাখা দেখা যাবে না। কারণ ছবিটা উঠতে, বা ফ্যাশনের একটা পাখা ঐ সেন্সরে ছাপ ফেলতে সময় লাগে ১ সেকেন্ড কিন্তু, ১ সেকেন্ডে ঐ পাখাটা যায়গা বদলে ১০-১৫ বার পাক খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু আই,এস,ও,১৬০০ তে ঐ ফ্যাশনের ছবি তুললে মনে হবে স্থির। কারন, যদি ফ্যানটা ১০ বার ঘুরে, তার মানে তার একবার ঘুরতে লাগে ১ সেকেন্ডের ১০ ভাগের ১ ভাগ, আর আই,এস,ও,১৬০০ মানে সেকেন্ডের ১৬ ভাগের এক ভাগ। আবার যেহেতু বেশি আই,এস,ও, মানে অল্প সময়, তাই, আলোর কনা-ও অনেক কম। সেই একই কারণে, বেশি আই,এস,ও, তে ছবির ডিটেইল একটু কমে যায় আর গ্রেইন (নয়েজ) বেড়ে যায়। কারণ, অল্প সংখ্যক আলোর কনা ফিল্মে     / সেন্সরে আঘাত করছে।

নিচের ছবিটা ব্যাপারটা ক্লিয়ার করবে।




আর যদি হাতের কাছে ক্যামেরা থাকে নিজেই চেক করে নাও। তবে অবশ্যই ফ্লাশ অফ করে।

এখন আসি ফোকাস ব্যাপারটায়। এটা চেক করতে শুধু জুম ইন আর আউট করেই চেক করা যায়। যত বেশি জুম করি, তত বেশি পরিমানে লেন্স বের হয়। মানে, লেন্স হতে ক্যামেরার ফিল্ম/সেন্সরের দুরত্ব বাড়তে থাকে। ডিজিটাল ক্যামেরায় ফোকাস ফাইন-টিউনের একটা ব্যাপার বেশি পরিমানে থাকে, যেটাকে আমরা অটো-ফোকাস বলেই চিনি। এটা না করলে যা হবে, ত হল ছবিটা ঘোলা আসবে। কারণ, যে বস্তুটার ছবি আমরা তুলতে চাইছি তা যতটা দুরে, আমরা তার চেয়েও দুরে বা কাছে ফোকাস পয়েন্ট সেট করে ফেলেছি। এটা সেট করতে ক্যামেরার শাটার-বাটন অল্প চাপ দিয়ে ধরে রাখতে হয়।

এটা টেস্ট করতে, এমন এক জায়গায় জুম সেট কর যেন ঘোলা দেখা যায়। তারপর শাটার-বাটন অল্প চাপ দিয়ে রাখতে হবে (ছবি তুলতে যতটা চাপ লাগে তার অর্ধেক); ক্যামেরা তখন অটোমেটিক ছবিটা স্পষ্ট করে নেবে। এরপর আরো জোরে চাপ দিলে ছবি উঠে যাবে।

বাকি ব্যাপারগুলো চেক করতে একটু উন্নত ক্যামেরা লাগবে। আমার সনির সাইবার শট - এইচ সিরিজ বা ডাব্লিউ সিরিজের অটোমেটিক ডিজিটাল ক্যামেরা সহজ লাগে। অন্য (ডিজিটাল) ক্যামেরাতেও এই ফাংশনগুলো থাকে। যেটা সবচেয়ে বেশি কমন, সেটা হল, শাটার স্পিড কন্ট্রোল।

আর এটা বুঝতে হলে, আমার আগের পোস্টটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া দরকার।

শাটার স্পিড আমরা কখন বদলাবো? যখন আলোর কোন কারসাজি করার দরকার হবে। এটা বুঝাতে হলে আগে একটা প্রশ্ন করি। ডিজিটাল ক্যামেরায় কোন ছবি তোলা কঠিন?

উত্তরটা সবার আলাদা হবে মনে হচ্ছে। তবে একটা কাজ কর, রাতের আকাশের ছবি তোলার চেষ্টা করে দেখ। বুঝতে পারবে কোন ছবি তোলা কঠিন।

কিন্তু রাতের আকাশের ছবি তোলা কঠিন কেন? কারণ রাতের বেলায় আলো অনেক কম থাকে। তাই ক্যামেরার সেন্সরেও তা খুব কম ছাপ ফেলতে পারে। একই কারণে, লো লাইটে যে কোন ছবি তোলা বেশ কঠিন।

কেন কঠিন সেটা তো বললাম। আলো কম, তাই সেন্সরে ছাপ কম পরে। তাহলে উপায় কি? এখন পর্যন্ত যা বলেছি, সেটার উপর ভিত্তি করে সহজেই বলা যায়, ক্যামেরার সেন্সরের সেনসিটিভিটি বাড়িয়ে নেয়া। মানে, আই,এস,ও, বাড়িয়ে নেয়া।

কিন্তু, আই,এস,ও, বাড়ালে অন্য কিছু সাইড ইফেক্ট তৈরি হয়। সেন্সর গুলো আলোর প্রতি সেনসিটিভ। তাই যে কোন আলোতেই তার উপর ছাপ পড়বে। এই কথাটার গভীরে গেলে, বলতে হয়, দৃশ্যমান, অদৃশ্য সব আলোতেই সেন্সরে ইফেক্ট পরে। রাতে আলো থাকে না, কথাটা ঠিক না। আলো ঠিকই থাকে, কিন্তু দৃশ্যমান আলো থাকে না, ইনফ্রারেড, আলট্রা-ভায়োলেট এসব আলো থাকে। কিন্তু এসব আলো আমাদের চোখ দেখতে না পেলেও সেন্সর দেখতে পায়। আর তার সেনসিটিভিটি বা আই,এস,ও, বাড়ালে, এসব আলোর সেনসিটিভিটিও বেড়ে যায়। আর সেই কারণে, ছবিতে এসব আলোও ছাপ ফেলে। আল্টিমেট রেজাল্ট হল, ফিল্ম গ্রেইন বা নয়েজ। আর যদি আমরা আই,এস,ও, বাড়িয়ে ৩২০০ করে রাতের আকাশের ছবি তুলি, তো এই নয়েজ এত বেশি হবে যে তার ফাঁকে সব তারা গুলো হারিয়ে যাবে। শুধু নয়েজ আর অন্ধকারের ছবি উঠবে।

তাই, আমাদের লো লাইটে ছবি তোলার অন্য কোন উপায় খুঁজতে হবে। কি সেটা?

আমি এটা বলেছি, আই,এস,ও, বাড়ালে কোন লাভ নাই। তাই আই,এস,ও, ১০০তেই সেট করি, পারলে তারও কম। এর ফলে আমাদের সেন্সর বা ফিল্ম হুট-হাট কোন আলো পেলেই ছবি বানিয়ে ফেলবে না। এবার আমরা যদি এমন ব্যবস্থা করি, যে সেন্সরের উপর অনেকক্ষণ ধরে আলো পরতে থাকে, তাহলে কি হয়? তাহলেও সেন্সর সব আলোই সেন্স করবে, কিন্তু সে আলোর প্রভাব ছবিতে অনেক কম পরিমানে পরবে। আর বহু সময় ধরে আলো পড়লেই ছবি তৈরি হবে। অল্প অল্প করে তারার আলো এসে ছবিতে ছাপ ফেলতে থাকবে, আর অনেকটা সময় ধরে ছবিটা তৈরি হবে।

এটা কিভাবে করা যায়? শাটার স্পিড। আমরা শাটার-স্পিড কমাতে কমিয়ে এই কাজটা করতে পারি। শাটার স্পিড বাড়ানো মান, শাটার খুলে বন্ধ হওয়ার স্পিড বাড়া। মানে কম সময় ধরে শাটার খোলা থাকা, আর শাটার-স্পিড কমানো মানে, বেশি সময় ধরে শাটার খোলা থাকা। আর শাটার খোলা থাকা মানেই, আলো সেন্সরে পৌছানোর দরজা খোলা থাকা।

এভাবেই রাতের ছবি তোলা হয়। তবে যেহেতু শাটার অনেকক্ষণ ধরে খোলা থাকবে, আর আলো ঢুকবে, আলো যেন বদলে না যায়, সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কিভাবে? যতোক্ষন শাটার খোলা, ক্যামেরা যেন কোন মতেই না নড়ে যায়। ট্রাইপড হলে ভাল হয়। না থাকলে, কোনকিছুর উপর ক্যামেরা রেখে টাইমার অথবা রিমোট বাটন দিয়ে ছবি তোলা যায়।

একই ভাবে আমিও একটি ছবি তুলেছি, শাটার স্পিড অনেক কম, ১০” (দশ সেকেন্ড)। আই,এস,ও, অনেক কম, আই,এস,ও,-৮০; আর এপার্চার (এটা পরে বুঝাচ্ছি) কম (f/৮), নিচে ছবিটা আছে।


From My Night Photography


আরেকটা


From One Moon in Thousand Colors



এবার বলি শাটার খোলা থাকা অবস্থায় নড়লে কি হবে। যে অংশটা নড়ে গেছে, সেটা ঘোলা হয়ে যাবে। বেশি নড়লে অদৃশ্য হয়ে যাবে। এগুলো নিয়ে কিছু এক্সপেরীমেন্ট করা যেতে পারে।

আমি দুইটা এক্সপেরীমেন্টের ছবি দিচ্ছি।



১. [ISO – 125, Shutter Speed / Exposure = 15 seconds, Aperture – f/8]

From আমার কিলিক-গুলান


২. [ISO – 125, Shutter Speed / Exposure = 15 seconds, Aperture – f/8] এখানে আমি নিজেই ঘোলা হতে হতে গায়েব হয়ে গেছি। যেহেতু জরূরী নয়, বাকিদের চেহারা ঢেকে করে দিয়েছি ফটোশপে।

From My Night Photography


যদি ডিজিটাল ক্যামেরা হয়, তবে ইউজার ম্যানুয়াল খুলে পড়া শুরু কর, আর ক্যামেরা হাতে নিয়ে P আর M এই দুইটা সেটিং নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করলেই শাটার-স্পিড আর আই,এস,ও, সেটিং কন্ট্রোল করা শিখে যাবে। P হল Program Auto এবং M হল Manual. সাধারণত, নরমাল ছবির জন্য A (মানে Automatic) সেটিং-এ ক্যামেরা রাখলেই ভালো ছবি উঠে। কিন্তু এক্সপিরীমেন্ট করতে গেলে বাকি সেটিংস গুলো লাগে।

তোমরাও এমন কিছু এক্সপেরীমেন্ট করতে পার। দেখবে, ফটোশপ ছাড়াই অনেক ইফেক্ট দেয়া যায়। 

তোমরা যা শিখলে তা প্রাকটিস করতে থাক, আমি পরের টিউটোরিয়ালে আরও কিছু টিপস দিব।


Popular posts from this blog

জেনারেশন গ্যাপ

জেনারেশন এ পরিবর্তন আসে অবশ্যম্ভাবী হয়ে। এর কোন ব্যতিক্রম নাই। কেউ চাক বা না চাক এই প্রক্রিয়া চলবেই। ভাল লাগুক বা মন্দ লাগুক কেউ সময় কে থামাতে পারবে না। এর মধ্যে বিতর্ক এসে যায় ভাল পরিবর্তন আর মূল্যবোধের নিম্নগামীতা নিয়ে। কিন্তু আমি সেসব নিয়েও কথা বলছি না। আমি বলছি কারণ যুগে যুগে সব মানুষের অপ্ত বাক্য ‘ দুনিয়াটা রসাতলে গেল ’। আমার দাদা আমার দাদী কে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং তার মৃত্যুশোকে সন্ন্যাসী হন। তিনি তখন অবশ্য ছিলেন যুব-সমাজ রসাতলে যাবার অন্যতম উদাহরণ। এখন অবিশ্বাস্য লাগতেই পারে কিন্তু তখন কেউ তাকে ছেড়ে কথা বলেনি। আমার বাবা রবীন্দ্র সঙ্গীত এর ভীষণ ভক্ত ছিল কিন্তু তার সময় এটা ছিল সঙ্গীত এর নামে অশ্লীলতা। আব্বুকেও সিনেমা হলে সিনেমা দেখাতে যাবার জন্য অসংখ্যবার শুনতে হয়েছে যুব-সমাজ রসাতলে গেল। এসব সিনেমা কে এখন আমরা আর্ট পিস এর সম্মান দেই। এখন সবার গা-জ্বালা করা একটা সর্বনাম হল ডিজুস জেনারেশন বা আধুনিক ইয়ো পোলাপান। সবার মত অনুযায়ী তাদের কোন শেকড়ই নাই এবং এরা অন্ধভাবে পশ্চিমা সভ্যতা অনুকরণ ও অনুসরণ করে। কিন্তু সময় যখন সব বদলায় তখন সময় এর সাথে যুদ্ধ করা; আমি ঠিক কিন্...

দুঃসময় বা দুঃস্বপ্নের সময়...

কেন যেন মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্ন দেখছি, আর প্রচন্ড অসহায় হয়ে চাচ্ছি, কেউ আমার ঘুমটা এক ঝটকায় ভেঙ্গে দিক। দুঃস্বপ্নের শুরু মায়ের অসুস্থতা দিয়ে। এখান ওখান করে শেষ পর্যন্ত কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৌছালাম, ইমারজেন্সি-তে ওদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতেই মেইল এল, আম্মার COVID-19 পজিটিভ। সব ভয় ভুলে, চলে গেলাম রোগি ভরা ওয়ার্ডে, বেডে শুইয়ে দিলাম, ডায়ালাইসিস করে দিলাম। চলে আসার সময়, একবার মনে হল, এর পর আর দেখা হবে না। দু'দিন পর, ICU তে যায়গা পাওয়ায়, একটু নিশ্চিন্তে অফিসের একটা মিটিং এ জয়েন করলাম। মাঝামাঝি সময় ফোন এল, আম্মু সব চিকিৎসার বাইরে চলে গেছে, আম্মুকে নিয়ে আসতে হবে। সেদিন সেপ্টেম্বরের ৩০, ২০২০। ঈদের আর দুদিন বাকি। পরদিন বানানি কবরস্থানে মাটি চাপা দিলাম। সেই সময় প্রচন্ড বৃষ্টি, আগের দিন থেকেই স্বাভাবিকভাবেই চলছিলাম, কিন্তু কেন যেন এখন আর পারলাম না, সকল আত্মসংযমের বাধ ভেঙ্গে চুরে, বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে কান্না এল।  বৃষ্টির পানি, মুখের মাস্ক, পিপিই সব মিলে সেই চোখের পানি লুকিয়েই ছিল হয়তো, খেয়াল করা হয়নি। বা সেই অবস্থায় ও ছিলাম না।  এর পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন, বাসার সবার। এর মাঝেই বাবার পাতলা পায়খা...

Let the divine hand solve your problems...

We had been under British colonial rulings for 200 years. Then we had been under Pakistani dictatorship. We had fought for establishing our mother language, Bangla as the official language of our country while under Pakistani rulings. The effect of all these is, we have a 12 year schooling on which we have English as our subject. After that, for higher education, most of the universities use English medium. And the ability to speak in English is taken as a measure of how smart a person is. Though I can't find how not speaking own language can be taken as smartness. But that's another story. Despite all these, we don't use English anywhere in our everyday activities. And I think except some rootless junks of the society, deep down ourselves, each of us have an unwillingness to learn the language. As for example, in our university, we have an English medium environment, but that is somehow limited inside the class. And sometimes, even inside the class, we freely use B...