Tuesday, August 27, 2013

ছোট্ট বাবুদের ফটোগ্রাফির সহজ পাঠ - ২

বাবুরা কেমন আছ?


গত পোস্টের কথা মনে আছে? ফটোগ্রাফির বেসিক টার্ম গুলা বলেছিলাম। আজ এগুলো দিবে কি হয়, কি করে তা বলব।  কিন্তু, ছোট্ট বাবুদের মনে রাখার সমস্যার কথা আমি জানি। তাই, নতুন একটা ট্যাব খুলে তাতে পুরানা পোস্ট টা ওপেন করে তবেই এই পোস্ট পড়া শুরু কর।

প্রথমে আসি আই,এস,ও,-তে।



আলো কম বা স্পিড বেশি এমন ছবি তুলতে বেশি আই,এস,ও, দরকার। উদাহারন স্বরুপ ফ্যাশনের পাখার ছবির কথা বলা যায়। যদি ফ্যাশনটা সেকেন্ডে ১০-১৫ বার ঘুরে, তাহলে সেটা যদি আই,এস,ও,১০০ দিয়ে তোলা হয়, ফ্যানের পাখা দেখা যাবে না। কারণ ছবিটা উঠতে, বা ফ্যাশনের একটা পাখা ঐ সেন্সরে ছাপ ফেলতে সময় লাগে ১ সেকেন্ড কিন্তু, ১ সেকেন্ডে ঐ পাখাটা যায়গা বদলে ১০-১৫ বার পাক খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু আই,এস,ও,১৬০০ তে ঐ ফ্যাশনের ছবি তুললে মনে হবে স্থির। কারন, যদি ফ্যানটা ১০ বার ঘুরে, তার মানে তার একবার ঘুরতে লাগে ১ সেকেন্ডের ১০ ভাগের ১ ভাগ, আর আই,এস,ও,১৬০০ মানে সেকেন্ডের ১৬ ভাগের এক ভাগ। আবার যেহেতু বেশি আই,এস,ও, মানে অল্প সময়, তাই, আলোর কনা-ও অনেক কম। সেই একই কারণে, বেশি আই,এস,ও, তে ছবির ডিটেইল একটু কমে যায় আর গ্রেইন (নয়েজ) বেড়ে যায়। কারণ, অল্প সংখ্যক আলোর কনা ফিল্মে     / সেন্সরে আঘাত করছে।

নিচের ছবিটা ব্যাপারটা ক্লিয়ার করবে।




আর যদি হাতের কাছে ক্যামেরা থাকে নিজেই চেক করে নাও। তবে অবশ্যই ফ্লাশ অফ করে।

এখন আসি ফোকাস ব্যাপারটায়। এটা চেক করতে শুধু জুম ইন আর আউট করেই চেক করা যায়। যত বেশি জুম করি, তত বেশি পরিমানে লেন্স বের হয়। মানে, লেন্স হতে ক্যামেরার ফিল্ম/সেন্সরের দুরত্ব বাড়তে থাকে। ডিজিটাল ক্যামেরায় ফোকাস ফাইন-টিউনের একটা ব্যাপার বেশি পরিমানে থাকে, যেটাকে আমরা অটো-ফোকাস বলেই চিনি। এটা না করলে যা হবে, ত হল ছবিটা ঘোলা আসবে। কারণ, যে বস্তুটার ছবি আমরা তুলতে চাইছি তা যতটা দুরে, আমরা তার চেয়েও দুরে বা কাছে ফোকাস পয়েন্ট সেট করে ফেলেছি। এটা সেট করতে ক্যামেরার শাটার-বাটন অল্প চাপ দিয়ে ধরে রাখতে হয়।

এটা টেস্ট করতে, এমন এক জায়গায় জুম সেট কর যেন ঘোলা দেখা যায়। তারপর শাটার-বাটন অল্প চাপ দিয়ে রাখতে হবে (ছবি তুলতে যতটা চাপ লাগে তার অর্ধেক); ক্যামেরা তখন অটোমেটিক ছবিটা স্পষ্ট করে নেবে। এরপর আরো জোরে চাপ দিলে ছবি উঠে যাবে।

বাকি ব্যাপারগুলো চেক করতে একটু উন্নত ক্যামেরা লাগবে। আমার সনির সাইবার শট - এইচ সিরিজ বা ডাব্লিউ সিরিজের অটোমেটিক ডিজিটাল ক্যামেরা সহজ লাগে। অন্য (ডিজিটাল) ক্যামেরাতেও এই ফাংশনগুলো থাকে। যেটা সবচেয়ে বেশি কমন, সেটা হল, শাটার স্পিড কন্ট্রোল।

আর এটা বুঝতে হলে, আমার আগের পোস্টটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া দরকার।

শাটার স্পিড আমরা কখন বদলাবো? যখন আলোর কোন কারসাজি করার দরকার হবে। এটা বুঝাতে হলে আগে একটা প্রশ্ন করি। ডিজিটাল ক্যামেরায় কোন ছবি তোলা কঠিন?

উত্তরটা সবার আলাদা হবে মনে হচ্ছে। তবে একটা কাজ কর, রাতের আকাশের ছবি তোলার চেষ্টা করে দেখ। বুঝতে পারবে কোন ছবি তোলা কঠিন।

কিন্তু রাতের আকাশের ছবি তোলা কঠিন কেন? কারণ রাতের বেলায় আলো অনেক কম থাকে। তাই ক্যামেরার সেন্সরেও তা খুব কম ছাপ ফেলতে পারে। একই কারণে, লো লাইটে যে কোন ছবি তোলা বেশ কঠিন।

কেন কঠিন সেটা তো বললাম। আলো কম, তাই সেন্সরে ছাপ কম পরে। তাহলে উপায় কি? এখন পর্যন্ত যা বলেছি, সেটার উপর ভিত্তি করে সহজেই বলা যায়, ক্যামেরার সেন্সরের সেনসিটিভিটি বাড়িয়ে নেয়া। মানে, আই,এস,ও, বাড়িয়ে নেয়া।

কিন্তু, আই,এস,ও, বাড়ালে অন্য কিছু সাইড ইফেক্ট তৈরি হয়। সেন্সর গুলো আলোর প্রতি সেনসিটিভ। তাই যে কোন আলোতেই তার উপর ছাপ পড়বে। এই কথাটার গভীরে গেলে, বলতে হয়, দৃশ্যমান, অদৃশ্য সব আলোতেই সেন্সরে ইফেক্ট পরে। রাতে আলো থাকে না, কথাটা ঠিক না। আলো ঠিকই থাকে, কিন্তু দৃশ্যমান আলো থাকে না, ইনফ্রারেড, আলট্রা-ভায়োলেট এসব আলো থাকে। কিন্তু এসব আলো আমাদের চোখ দেখতে না পেলেও সেন্সর দেখতে পায়। আর তার সেনসিটিভিটি বা আই,এস,ও, বাড়ালে, এসব আলোর সেনসিটিভিটিও বেড়ে যায়। আর সেই কারণে, ছবিতে এসব আলোও ছাপ ফেলে। আল্টিমেট রেজাল্ট হল, ফিল্ম গ্রেইন বা নয়েজ। আর যদি আমরা আই,এস,ও, বাড়িয়ে ৩২০০ করে রাতের আকাশের ছবি তুলি, তো এই নয়েজ এত বেশি হবে যে তার ফাঁকে সব তারা গুলো হারিয়ে যাবে। শুধু নয়েজ আর অন্ধকারের ছবি উঠবে।

তাই, আমাদের লো লাইটে ছবি তোলার অন্য কোন উপায় খুঁজতে হবে। কি সেটা?

আমি এটা বলেছি, আই,এস,ও, বাড়ালে কোন লাভ নাই। তাই আই,এস,ও, ১০০তেই সেট করি, পারলে তারও কম। এর ফলে আমাদের সেন্সর বা ফিল্ম হুট-হাট কোন আলো পেলেই ছবি বানিয়ে ফেলবে না। এবার আমরা যদি এমন ব্যবস্থা করি, যে সেন্সরের উপর অনেকক্ষণ ধরে আলো পরতে থাকে, তাহলে কি হয়? তাহলেও সেন্সর সব আলোই সেন্স করবে, কিন্তু সে আলোর প্রভাব ছবিতে অনেক কম পরিমানে পরবে। আর বহু সময় ধরে আলো পড়লেই ছবি তৈরি হবে। অল্প অল্প করে তারার আলো এসে ছবিতে ছাপ ফেলতে থাকবে, আর অনেকটা সময় ধরে ছবিটা তৈরি হবে।

এটা কিভাবে করা যায়? শাটার স্পিড। আমরা শাটার-স্পিড কমাতে কমিয়ে এই কাজটা করতে পারি। শাটার স্পিড বাড়ানো মান, শাটার খুলে বন্ধ হওয়ার স্পিড বাড়া। মানে কম সময় ধরে শাটার খোলা থাকা, আর শাটার-স্পিড কমানো মানে, বেশি সময় ধরে শাটার খোলা থাকা। আর শাটার খোলা থাকা মানেই, আলো সেন্সরে পৌছানোর দরজা খোলা থাকা।

এভাবেই রাতের ছবি তোলা হয়। তবে যেহেতু শাটার অনেকক্ষণ ধরে খোলা থাকবে, আর আলো ঢুকবে, আলো যেন বদলে না যায়, সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কিভাবে? যতোক্ষন শাটার খোলা, ক্যামেরা যেন কোন মতেই না নড়ে যায়। ট্রাইপড হলে ভাল হয়। না থাকলে, কোনকিছুর উপর ক্যামেরা রেখে টাইমার অথবা রিমোট বাটন দিয়ে ছবি তোলা যায়।

একই ভাবে আমিও একটি ছবি তুলেছি, শাটার স্পিড অনেক কম, ১০” (দশ সেকেন্ড)। আই,এস,ও, অনেক কম, আই,এস,ও,-৮০; আর এপার্চার (এটা পরে বুঝাচ্ছি) কম (f/৮), নিচে ছবিটা আছে।


From My Night Photography


আরেকটা


From One Moon in Thousand Colors



এবার বলি শাটার খোলা থাকা অবস্থায় নড়লে কি হবে। যে অংশটা নড়ে গেছে, সেটা ঘোলা হয়ে যাবে। বেশি নড়লে অদৃশ্য হয়ে যাবে। এগুলো নিয়ে কিছু এক্সপেরীমেন্ট করা যেতে পারে।

আমি দুইটা এক্সপেরীমেন্টের ছবি দিচ্ছি।



১. [ISO – 125, Shutter Speed / Exposure = 15 seconds, Aperture – f/8]

From আমার কিলিক-গুলান


২. [ISO – 125, Shutter Speed / Exposure = 15 seconds, Aperture – f/8] এখানে আমি নিজেই ঘোলা হতে হতে গায়েব হয়ে গেছি। যেহেতু জরূরী নয়, বাকিদের চেহারা ঢেকে করে দিয়েছি ফটোশপে।

From My Night Photography


যদি ডিজিটাল ক্যামেরা হয়, তবে ইউজার ম্যানুয়াল খুলে পড়া শুরু কর, আর ক্যামেরা হাতে নিয়ে P আর M এই দুইটা সেটিং নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করলেই শাটার-স্পিড আর আই,এস,ও, সেটিং কন্ট্রোল করা শিখে যাবে। P হল Program Auto এবং M হল Manual. সাধারণত, নরমাল ছবির জন্য A (মানে Automatic) সেটিং-এ ক্যামেরা রাখলেই ভালো ছবি উঠে। কিন্তু এক্সপিরীমেন্ট করতে গেলে বাকি সেটিংস গুলো লাগে।

তোমরাও এমন কিছু এক্সপেরীমেন্ট করতে পার। দেখবে, ফটোশপ ছাড়াই অনেক ইফেক্ট দেয়া যায়। 

তোমরা যা শিখলে তা প্রাকটিস করতে থাক, আমি পরের টিউটোরিয়ালে আরও কিছু টিপস দিব।