Friday, August 23, 2013

ছোট্ট বাবুদের ফটোগ্রাফির সহজ পাঠ - ১

ছোট্ট বাবুরা, কেমন আছ সবাই?

গত পোস্টে কিছু মাপজোক দিয়েছিলাম যেন তোমরা সোশাল মিডিয়াতে মাপ-মতো ছবি এডিট করতে পার। কিন্তু যদি ছবিই না থাকে তাহলে ছবি এডিট করবে কিভাবে?
এবার তাই ছবি তোলা নিয়ে কিছু শিখাব।

প্রথমে বলি ছবি কিভাবে তোলা হয়...
একটা সময় ছিল যখন ছবি তুলতে ফিল্ম ক্যামেরা লাগত। সেই ফিল্মের উপর বিশেষ কিছু কেমিকেলের আস্তর দেয়া থাকত। আলো হচ্ছে ছোট-ছোট কণার সমষ্টি। এই কণাগুলোকে ফোটন বলে। যখন ফোটন এসে এই কেমিকেলের উপর পরত, তখন তা বিক্রিটা করে রং বদলে ফেলত। আর ছবি তৈরি হত। এখন ডিজিটাল ক্যামেরার যুগ। কিন্ত ছবি তোলার মেকলানিজমটা প্রায় একই আছে। শুধু, কেমিকেলের আস্তর দেয়া ফিল্মের জায়গা দখল করেছে সেন্সর।



ব্যাপারটা অনেকটা সুই-দিয়ে খোদাই করে ছবি/ভাস্কর্য বানানোর মত। আরও ভালভাবে বলতে গেলে, ধরি, আমাদের কাছে একটা নরম প্লেট আছে যেটাতে কোন পাথর ছুড়ে মারলে প্লেটের গায়ে গর্ত হয়ে যায়। এখন ধরি আমাদের কাছে যে পাথরগুলো আছে সেগুলো কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে।

  • পাথরগুলো সবসময় সরল রেখায় চলে।
  • পাথরগুলোর সাইজ (আকার) এবং ওজন সমান।
  • পাথরগুলোর রং আলাদা। এবং প্লেটের গায়ে ভিন্ন-ভিন্ন রংয়ের গর্ত তৈরি করে।

যেহেতু পাথরগুলোর সাইজ আর ওজন সমান, তাই সব পাথরই প্লেটের গায়ে সমান সাইজের গর্ত তৈরি করে। এখন যদি আমরা একটু গভীর গর্ত তৈরি করতে চাই, তাহলে কি করব? একই জায়গাতে আরো পাথর ছুড়তে হবে। ছবি তোলার ক্ষেত্রে, এই পাথর ছোঁড়ার কাজটা করে আলো। আর পাথরগুলোর আরও একটা নিয়ম থাকে,

  • পাথরগুলো সবসময় সবখানে সমান ভাবে ছড়িয়ে থাকে

এখন যদি আমরা আলো দিয়ে প্লেটের গায়ে গর্ত করতে (ছবি বানাতে) চাই সেক্ষেত্রে কি হবে? বেশি গভীর গর্ত করতে বেশি সময় প্লেটটা আলোর দিকে ধরে থাকতে হবে। তাহলেই বেশি-বেশি পাথর একই জায়গাতে পরে বেশি গভীর গর্ত তৈরি করবে।

আমরা পুরো ব্যাপারটা একটা ছবি দিয়ে দেখি,




এখানে, কালো বাক্সটা আসলেই একটা কালো বক্স, এর প্লেট-টা নীল, আলোর ছুড়ে মারা পাথরগুলো কমলা রং এর ডট আর সবুজ অংশটা একটা ফুটো, যা ইচ্ছে মত খোলা বা বন্ধ করা যায়।
ক্যামেরার ভিতরেও এমনই থাকে। যে সবুজ অংশটা দেখা যাচ্ছে, ক্যামেরায়, এটা শাটার, আলো তো আলোই, আর পিছনের প্লেটটা হয় সেন্সর না হয় ফিল্ম।

শাটার কতটা সময় ধরে খোল থাকবে, বা কতটা সময় ধরে আমরা সেন্সরে আলো দিয়ে আঘাত করব তাকে বলে শাটার স্পিড। আর সেন্সরে ইমেজ (গর্ত) তৈরিতে কতটা সময় লাগে, বা সেন্সরটা কতটা সেনসিটিভ, সেটার মাপ আই,এস,ও, হিসেবে পরিচিত। এই শাটার-স্পিড এবং আই,এস,ও, মিলে নির্ধারিত হয়, ছবিটা কতটা এক্সপোজড হবে।

ধরি, আমাদের সেন্সরের ক্ষমতা ৪ সেকেন্ড। তাহলে, শাটার্ স্পিড ৪ সেকেন্ড হলে পারফেক্ট ছবি উঠবে। যদি আমরা শাটার ৮ সেকেন্ড ধরে খুলে রাখি, তাহলে ছবিটা বেশি ঝলসে যাবে। যেটাকে ফটোগ্রাফির ভাষায় বলা হয়, ওভার-এক্সপোজার। একই ভাবে, ২ সেকেন্ড খুলে রাখলে ছবিটা অন্ধকার আসবে। এটাকে বলা হয়, আণ্ডার-এক্সপোজার।

শাটার স্পিড মাপা হয় সেকেন্ডে। তার মানে, ½ মানে আধা সেকেন্ড, ২ মানে ২ সেকেন্ড এভাবে। আর আই,এস,ও, মাপা হয় সেকেন্ডের ভগ্নাংশে। আই,এস,ও, ১০০ মানে ১ সেকেন্ড, আই,এস,ও, ২০০ মানে আধা সেকেন্ড, আই,এস,ও, ৪০০ মানে এক সেকেন্ডের ৪ ভাগের এক ভাগ এভাবে। 

আবার শাটার-টা কতটা বড় বা ছোট হবে সেই মাপ কে বলে এপার্চার। এটা নির্ধারণ করে কত বেশি আলো শাটার দিয়ে ঢুকতে পারবে। নিচের ছবিতে ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট হবে। 



এপার্চারের ক্ষেত্রে যত বড় নাম্বার তত কম এপার্চার, যত ছোট নাম্বার তত হাই এপার্চার।

এবার আসি ফোকাস প্রসঙ্গে, ফোকাস হল ক্যামেরা থেকে বস্তু (আলোর উৎস) কতটা দুরে তার মাপ। আসলে, ক্যামেরার লেন্স থেকে সেন্সরের দূরত্বই ফোকাস। এটা মাপা হয় মিলি-মিটারে। তবে সহজ করার জন্য ধরে নেওয়া যায়, শাটার হতে সেন্সরের দূরত্বই ফোকাস। এটা নির্ধারণ করে, আমার ক্যামেরা কতটুকু এলাকা কভার করবে। যেহেতু ক্যামেরার বডি ফিক্সড থাকে, তাই এটা আসলে  লেন্সের মাপ।



উপরের ছবিতে উপরের ক্যামেরাটা বেশি দুরে, একটু বেশি, এলাকা কভার করছে আর নিচের ক্যামেরাটা কম দুরে কম এলাকা। 

আর মাঝের ক্যামেরাটা, কম দূরত্বের, বেশি এলাকা কভার করছে; এটাকে বলে ওয়াইড-এঙ্গেল (লেন্স)। তেমনি আরেক জাতের ক্যামেরা আছে যারা বেশি দুরে অল্প এলাকা কভার করে, সেগুলোকে বলে টেলিফটো (লেন্স)।

বেসিক ফটোগ্রাফির টার্ম গুলা তো বুঝালাম, কিন্তু এই টার্ম গুলো কি কাজে লাগে বুঝাতে হলে ছবি লাগবে। কিন্তু তোমরা যেহেতু ছোট্ট বাবু, এত এত জিনিস একদিনে শেখালে মনে রাখতে পারবে না। তাই বাকিটা আগামী পোস্টে লিখব।