Skip to main content

ছোট্ট বাবুদের ফটোগ্রাফির সহজ পাঠ - ১

ছোট্ট বাবুরা, কেমন আছ সবাই?

গত পোস্টে কিছু মাপজোক দিয়েছিলাম যেন তোমরা সোশাল মিডিয়াতে মাপ-মতো ছবি এডিট করতে পার। কিন্তু যদি ছবিই না থাকে তাহলে ছবি এডিট করবে কিভাবে?
এবার তাই ছবি তোলা নিয়ে কিছু শিখাব।

প্রথমে বলি ছবি কিভাবে তোলা হয়...
একটা সময় ছিল যখন ছবি তুলতে ফিল্ম ক্যামেরা লাগত। সেই ফিল্মের উপর বিশেষ কিছু কেমিকেলের আস্তর দেয়া থাকত। আলো হচ্ছে ছোট-ছোট কণার সমষ্টি। এই কণাগুলোকে ফোটন বলে। যখন ফোটন এসে এই কেমিকেলের উপর পরত, তখন তা বিক্রিটা করে রং বদলে ফেলত। আর ছবি তৈরি হত। এখন ডিজিটাল ক্যামেরার যুগ। কিন্ত ছবি তোলার মেকলানিজমটা প্রায় একই আছে। শুধু, কেমিকেলের আস্তর দেয়া ফিল্মের জায়গা দখল করেছে সেন্সর।



ব্যাপারটা অনেকটা সুই-দিয়ে খোদাই করে ছবি/ভাস্কর্য বানানোর মত। আরও ভালভাবে বলতে গেলে, ধরি, আমাদের কাছে একটা নরম প্লেট আছে যেটাতে কোন পাথর ছুড়ে মারলে প্লেটের গায়ে গর্ত হয়ে যায়। এখন ধরি আমাদের কাছে যে পাথরগুলো আছে সেগুলো কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে।

  • পাথরগুলো সবসময় সরল রেখায় চলে।
  • পাথরগুলোর সাইজ (আকার) এবং ওজন সমান।
  • পাথরগুলোর রং আলাদা। এবং প্লেটের গায়ে ভিন্ন-ভিন্ন রংয়ের গর্ত তৈরি করে।

যেহেতু পাথরগুলোর সাইজ আর ওজন সমান, তাই সব পাথরই প্লেটের গায়ে সমান সাইজের গর্ত তৈরি করে। এখন যদি আমরা একটু গভীর গর্ত তৈরি করতে চাই, তাহলে কি করব? একই জায়গাতে আরো পাথর ছুড়তে হবে। ছবি তোলার ক্ষেত্রে, এই পাথর ছোঁড়ার কাজটা করে আলো। আর পাথরগুলোর আরও একটা নিয়ম থাকে,

  • পাথরগুলো সবসময় সবখানে সমান ভাবে ছড়িয়ে থাকে

এখন যদি আমরা আলো দিয়ে প্লেটের গায়ে গর্ত করতে (ছবি বানাতে) চাই সেক্ষেত্রে কি হবে? বেশি গভীর গর্ত করতে বেশি সময় প্লেটটা আলোর দিকে ধরে থাকতে হবে। তাহলেই বেশি-বেশি পাথর একই জায়গাতে পরে বেশি গভীর গর্ত তৈরি করবে।

আমরা পুরো ব্যাপারটা একটা ছবি দিয়ে দেখি,




এখানে, কালো বাক্সটা আসলেই একটা কালো বক্স, এর প্লেট-টা নীল, আলোর ছুড়ে মারা পাথরগুলো কমলা রং এর ডট আর সবুজ অংশটা একটা ফুটো, যা ইচ্ছে মত খোলা বা বন্ধ করা যায়।
ক্যামেরার ভিতরেও এমনই থাকে। যে সবুজ অংশটা দেখা যাচ্ছে, ক্যামেরায়, এটা শাটার, আলো তো আলোই, আর পিছনের প্লেটটা হয় সেন্সর না হয় ফিল্ম।

শাটার কতটা সময় ধরে খোল থাকবে, বা কতটা সময় ধরে আমরা সেন্সরে আলো দিয়ে আঘাত করব তাকে বলে শাটার স্পিড। আর সেন্সরে ইমেজ (গর্ত) তৈরিতে কতটা সময় লাগে, বা সেন্সরটা কতটা সেনসিটিভ, সেটার মাপ আই,এস,ও, হিসেবে পরিচিত। এই শাটার-স্পিড এবং আই,এস,ও, মিলে নির্ধারিত হয়, ছবিটা কতটা এক্সপোজড হবে।

ধরি, আমাদের সেন্সরের ক্ষমতা ৪ সেকেন্ড। তাহলে, শাটার্ স্পিড ৪ সেকেন্ড হলে পারফেক্ট ছবি উঠবে। যদি আমরা শাটার ৮ সেকেন্ড ধরে খুলে রাখি, তাহলে ছবিটা বেশি ঝলসে যাবে। যেটাকে ফটোগ্রাফির ভাষায় বলা হয়, ওভার-এক্সপোজার। একই ভাবে, ২ সেকেন্ড খুলে রাখলে ছবিটা অন্ধকার আসবে। এটাকে বলা হয়, আণ্ডার-এক্সপোজার।

শাটার স্পিড মাপা হয় সেকেন্ডে। তার মানে, ½ মানে আধা সেকেন্ড, ২ মানে ২ সেকেন্ড এভাবে। আর আই,এস,ও, মাপা হয় সেকেন্ডের ভগ্নাংশে। আই,এস,ও, ১০০ মানে ১ সেকেন্ড, আই,এস,ও, ২০০ মানে আধা সেকেন্ড, আই,এস,ও, ৪০০ মানে এক সেকেন্ডের ৪ ভাগের এক ভাগ এভাবে। 

আবার শাটার-টা কতটা বড় বা ছোট হবে সেই মাপ কে বলে এপার্চার। এটা নির্ধারণ করে কত বেশি আলো শাটার দিয়ে ঢুকতে পারবে। নিচের ছবিতে ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট হবে। 



এপার্চারের ক্ষেত্রে যত বড় নাম্বার তত কম এপার্চার, যত ছোট নাম্বার তত হাই এপার্চার।

এবার আসি ফোকাস প্রসঙ্গে, ফোকাস হল ক্যামেরা থেকে বস্তু (আলোর উৎস) কতটা দুরে তার মাপ। আসলে, ক্যামেরার লেন্স থেকে সেন্সরের দূরত্বই ফোকাস। এটা মাপা হয় মিলি-মিটারে। তবে সহজ করার জন্য ধরে নেওয়া যায়, শাটার হতে সেন্সরের দূরত্বই ফোকাস। এটা নির্ধারণ করে, আমার ক্যামেরা কতটুকু এলাকা কভার করবে। যেহেতু ক্যামেরার বডি ফিক্সড থাকে, তাই এটা আসলে  লেন্সের মাপ।



উপরের ছবিতে উপরের ক্যামেরাটা বেশি দুরে, একটু বেশি, এলাকা কভার করছে আর নিচের ক্যামেরাটা কম দুরে কম এলাকা। 

আর মাঝের ক্যামেরাটা, কম দূরত্বের, বেশি এলাকা কভার করছে; এটাকে বলে ওয়াইড-এঙ্গেল (লেন্স)। তেমনি আরেক জাতের ক্যামেরা আছে যারা বেশি দুরে অল্প এলাকা কভার করে, সেগুলোকে বলে টেলিফটো (লেন্স)।

বেসিক ফটোগ্রাফির টার্ম গুলা তো বুঝালাম, কিন্তু এই টার্ম গুলো কি কাজে লাগে বুঝাতে হলে ছবি লাগবে। কিন্তু তোমরা যেহেতু ছোট্ট বাবু, এত এত জিনিস একদিনে শেখালে মনে রাখতে পারবে না। তাই বাকিটা আগামী পোস্টে লিখব।

Popular posts from this blog

দুঃসময় বা দুঃস্বপ্নের সময়...

কেন যেন মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্ন দেখছি, আর প্রচন্ড অসহায় হয়ে চাচ্ছি, কেউ আমার ঘুমটা এক ঝটকায় ভেঙ্গে দিক। দুঃস্বপ্নের শুরু মায়ের অসুস্থতা দিয়ে। এখান ওখান করে শেষ পর্যন্ত কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৌছালাম, ইমারজেন্সি-তে ওদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতেই মেইল এল, আম্মার COVID-19 পজিটিভ। সব ভয় ভুলে, চলে গেলাম রোগি ভরা ওয়ার্ডে, বেডে শুইয়ে দিলাম, ডায়ালাইসিস করে দিলাম। চলে আসার সময়, একবার মনে হল, এর পর আর দেখা হবে না। দু'দিন পর, ICU তে যায়গা পাওয়ায়, একটু নিশ্চিন্তে অফিসের একটা মিটিং এ জয়েন করলাম। মাঝামাঝি সময় ফোন এল, আম্মু সব চিকিৎসার বাইরে চলে গেছে, আম্মুকে নিয়ে আসতে হবে। সেদিন সেপ্টেম্বরের ৩০, ২০২০। ঈদের আর দুদিন বাকি। পরদিন বানানি কবরস্থানে মাটি চাপা দিলাম। সেই সময় প্রচন্ড বৃষ্টি, আগের দিন থেকেই স্বাভাবিকভাবেই চলছিলাম, কিন্তু কেন যেন এখন আর পারলাম না, সকল আত্মসংযমের বাধ ভেঙ্গে চুরে, বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে কান্না এল।  বৃষ্টির পানি, মুখের মাস্ক, পিপিই সব মিলে সেই চোখের পানি লুকিয়েই ছিল হয়তো, খেয়াল করা হয়নি। বা সেই অবস্থায় ও ছিলাম না।  এর পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন, বাসার সবার। এর মাঝেই বাবার পাতলা পায়খা...

জেনারেশন গ্যাপ

জেনারেশন এ পরিবর্তন আসে অবশ্যম্ভাবী হয়ে। এর কোন ব্যতিক্রম নাই। কেউ চাক বা না চাক এই প্রক্রিয়া চলবেই। ভাল লাগুক বা মন্দ লাগুক কেউ সময় কে থামাতে পারবে না। এর মধ্যে বিতর্ক এসে যায় ভাল পরিবর্তন আর মূল্যবোধের নিম্নগামীতা নিয়ে। কিন্তু আমি সেসব নিয়েও কথা বলছি না। আমি বলছি কারণ যুগে যুগে সব মানুষের অপ্ত বাক্য ‘ দুনিয়াটা রসাতলে গেল ’। আমার দাদা আমার দাদী কে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং তার মৃত্যুশোকে সন্ন্যাসী হন। তিনি তখন অবশ্য ছিলেন যুব-সমাজ রসাতলে যাবার অন্যতম উদাহরণ। এখন অবিশ্বাস্য লাগতেই পারে কিন্তু তখন কেউ তাকে ছেড়ে কথা বলেনি। আমার বাবা রবীন্দ্র সঙ্গীত এর ভীষণ ভক্ত ছিল কিন্তু তার সময় এটা ছিল সঙ্গীত এর নামে অশ্লীলতা। আব্বুকেও সিনেমা হলে সিনেমা দেখাতে যাবার জন্য অসংখ্যবার শুনতে হয়েছে যুব-সমাজ রসাতলে গেল। এসব সিনেমা কে এখন আমরা আর্ট পিস এর সম্মান দেই। এখন সবার গা-জ্বালা করা একটা সর্বনাম হল ডিজুস জেনারেশন বা আধুনিক ইয়ো পোলাপান। সবার মত অনুযায়ী তাদের কোন শেকড়ই নাই এবং এরা অন্ধভাবে পশ্চিমা সভ্যতা অনুকরণ ও অনুসরণ করে। কিন্তু সময় যখন সব বদলায় তখন সময় এর সাথে যুদ্ধ করা; আমি ঠিক কিন্...

Personal notes on my Transition form Windows to Linux - Part 1 : Prolouge

Deciding to move to Open-source/Free software and Linux for everyday task is not a small decision. Especially when living in Bangladesh where almost 80% of the people still uses ASCII font based system for typing Bangla language, paying for software is a very remote idea which happens to only to the “Other people”.