Monday, September 24, 2012

একখানা অর্বাচীন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার...

আমার একটা নতুন রোগের উপসর্গ দেখা দিয়াছে। ইহা নাকি খাদ্য গ্রহণে অনিয়ম করার ফসল। ইহার ফলে, ২/৩ দিন পরপর পশ্চাৎদ্বেশের বহিরা-ভরন ছিঁড়িয়া যাইবার উপক্রম হয়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানিতে পারিলাম, আরও অনেকেরই এই ব্যাধি রহিয়াছে, কিন্তু চক্ষুলজ্জার ভয়ে তাহা তারা প্রকাশ করিতে চাহেন না। এই সমস্যার সমাধানে তাহারা একটা ক্ষতিকর বস্তুর শরণাপন্ন হন, যাহাকে প্রকারান্তরে অনেকে সিগারেট/বিড়ির মাধ্যমে গ্রহণ করেন। উহা হইল নিকোটিন। এই নিকোটিন নামক বস্তুর সহিত যদি গরম দুগ্ধ মিশ্রিত চা বৃক্ষ-পত্রের নির্যাস গ্রহণ করা হয়, তবে নাকি ইহা আরও কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিন্তু, নিকোটিন নামক এই ক্ষতিকর বস্তুটিতে অভ্যস্ত হইয়া গেলে, অন্য এক প্রকার যন্ত্রণার সম্মুখীন হইবার আশংকা থাকে, তাহা হইল, যখনই এই বস্তু গ্রহণ করা হয়, তখনই আপনার জৈবিক বর্জ্য আপনার শরীর হইতে নিষ্ক্রান্ত হইবার প্রয়াসে আপনার পশ্চাৎ নির্গমন পথে আসিয়া চাপ প্রয়োগ করিতে থাকে।


আমি তাই একখানা বিকল্প সমাধান খুঁজিয়া পাইতে উদ্যোগী হই। এবং যথেষ্ট গবেষণা পূর্বক একখানা ফর্মুলা আবিষ্কার করিতে সক্ষম হইয়াছি। ইহা এখন পর্যন্ত কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় নাই।


ফর্মুলাখানা রতের খাদ্যগ্রহণের সময় ঘি সহযোগে গ্রহণ করিতে হয়। আপনি কি ঘন ডাউল নামক খাদ্যবস্তুটির সহিত পরিচিত? ইহা গরম ভাতের সহিত অতি উপদেশ খাদ্য বলিয়া প্রতীয়মান। ইহা রাঁধিবার পূর্বে কিছু পরিমাণ অতিরিক্ত প্রস্তুতি লইলেই আপনার চলিবে। পুই-এর শাক বলিয়া এক প্রকার সবজি আছে, তাহা প্রয়োজন অর্ধ কিলোগ্রাম পরিমাণ, ঢেঁড়স বা ভেন্ডী নামক সবজি প্রয়োজন আরও অর্ধ কিলোগ্রাম পরিমাণ। এই পুই-এর শাক আনিয়া, যথেষ্ট পানি সহযোগে উত্তমরূপে ধুইয়া নিন। এর পর এর পত্রগুলি ডাল হইতে ছিঁড়িয়া একটি পাত্রে জমা করিতে থাকুন। পুই-পত্রের আকার যদি অতিরিক্ত বড় হয়, তবে তাহাকে হস্ত প্রয়োগের মাধ্যমে দুই টুকরা করিয়া ছিঁড়িয়া ফেলা উত্তম। সমস্ত ডাল যখন পত্র-পল্লব বিচ্যুত হইয়া যাইবে, ডাল গুলোকে তখন, ২.৫ হইতে ৩ ইঞ্চি লম্বা লম্বা টুকরায় কাটিয়া পাত্রে জমা করুন। ইহার পর, ২/৩ জন ব্যক্তির উপযুক্ত পরিমাণ ঘন ডাল, রান্নার নিমিত্তে মশলা সহযোগে, চুলার উপর চড়াইয়া দিন। কিন্তু লবণ দিন স্বাভাবিকের দেড়/পৌনে দুই গুন, এবং পুই গুল্মলতার যেই ডালগুলি আপনি পূর্বেই আলাদা করিয়া রাখিয়াছিলেন, তাহাও এই ডালের সহিত যোগ করিয়া দিন। এবং রাঁধিতে থাকুন। রান্না প্রায় হইয়া আসিলে তাহাতে পুই-পত্র যোগ করুন এবং একটু নাড়িয়া অল্প আচে ঢাকুনি দিয়া রাখুন। কিছুক্ষণ পর পর নাড়িয়া দিতে থকুন যতক্ষণ না পুই-পত্র সম্পূর্ণ রূপে সিদ্ধ হইয়া গলিয়া যাইবার উপক্রম হয়।


এইদিকে যে ভেন্ডী আপনি আনিয়াছিলেন, তাহা কি হইবে? এই ভেন্ডী গুলাকেও উত্তমরূপে ধুইয়া লন এবং অর্ধ সেন্টিমিটার পুরু কুচিকুচি করিয়া কাটিয়া ফেলুন। তাহাতে খুবই স্বল্প পরিমাণ হলুদ দিয়া ভাজিয়া ফেলুন, যেন তাহার রং সবুজ থাকে। এর পর ভাত চড়াইয়া দিন। ভাত রাধা শেষ হইয়া গেলে বাসন লইয়া খাদ্য-গ্রহণের, প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।


ধোয়া উঠা গরম ভাত বাসনে লইয়া তাহাতে ঘি যোগ করুন এবং কিছুটা লবণ বা নুন যোগ করুন। এবং দ্রুত মাখিয়া ফেলিয়া দুই এক নলা পরিমাণ খাইয়া ফেলুন। লক্ষ্য করুন, যে ঘি মিশ্রিত এই ভাতের স্বাদে কেমন আমোদ লাভ করা যায়। ইহার করনেই সম্ভবত শাস্ত্রে ঋণ করিয়া ঘি খাইবার কথা বলা হইয়াছে। তাহার পর ঘি-মিশ্রিত ভাতে প্রচুর পরিমাণে পুই-এর ডাল এবং ভেন্ডী যোগে একসাথে মাখাইয়া খাদ্য গ্রহণ করুন। উল্লেখ্য, ফর্মুলার কার্যকারিতা পাইতে, আপনার প্রতিদিনের ভাত গ্রহণে চাইতে সোয়া এক গুন বেশি খাদ্য গ্রহণ করা আবশ্যক।


ইহার পর একখানা ঘুম দিন। প্রত্যুষে উঠিয়া আপনার প্রাতঃকৃত্য সরিতে যান। দেখিবেন, আপনার পশ্চাৎদ্বেশের বহিরা-ভরন ছিঁড়িয়া যাইবার উপক্রম আর হইতেছে না, বরং একখানা মোলায়েম অনুভূতির সহিত আপনার জৈবিক বর্জ্য আপনার শরীর হইতে নিষ্ক্রান্ত হইতেছে।

ইহাই হইল আমার ফর্মুলা। আমি এই যুগান্তকারী ফর্মুলা আবিষ্কারের উপর একখানা বৈজ্ঞানিক জার্নাল প্রকাশের পঁয়তারা করিতেছিলাম, কিন্তু আমার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী কইলেন, আমি যেন ইহা মুখচ্ছবি নামক একখানা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণার্থে উন্মুক্ত করিয়া দেই। ইহা ছাড়া তাহারা আরও কহিলেন, যেন, ইহা লইয়া একখানা প্রবন্ধ, ব্লগ নামক আন্তর্জাতিক দিন-পঞ্জিকায় প্রকাশ করিতে সচেষ্ট থাকি। তাহা হইলে জনকল্যাণ মূলক অবদানের কারণে আমার বিদেশ যাইবার পথ সুগম হইয়া যাইবে। এমনকি, আমি নাকি জনকল্যাণ মূলক অবদানের করনে শান্তিতে নোবেল পদকও পাইয়া যাইতে পারি, প্রধানমন্ত্রীর এই পদক লাভের পরপরই। আপাতত নোবেল কমিটি তাহার দালালের আবেদনটি বিবেচনাতে ব্যস্ত আছেন। তবে, আমার বিদেশ যাইবার গোপন বাসনাকে সফল করিতে আপনারা পছন্দ ও মন্তব্য করিয়া সহযোগিতা করিতে পারেন। কারণ শুনিয়াছি, কোন এক মর্কট নাকি আমাকে নিজ বিদেশ গমনের চেষ্টায় হুমকি স্বরূপ মনে করিয়া শত্রুতা মূলক ভাবে অপ-প্রচারণায় নামিয়াছে।

যদিও আমার তাহার প্রতি কোনরূপ ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নাই, তবু সে আমাকে কেন তাহার জনপ্রিয়তার প্রতি হুমকি স্বরূপ মনে করিয়া থাকে সেটা উক্ত মর্কটই বলিতে পারিবে। অতএব, আমি ঐ মর্কটকেও এইটা জানাইয়া দিতে চাই, কে প্রকৃত জনকল্যাণ মূলক কাজ করিতেছে তাহার বিচার করিতে জনগণ আছেন। নিজেই নিজেকে বিশেষ সমাজসেবী দাবি করিয়া চিৎকার করিয়া গেলে কোনরূপ ফল-লাভ হইবে না। জেলে কাটাইয়া কেউ মহান হইতে পারে না, কেউ ইহাকে মহান বলিয়া প্রচার চালাইলেও উহা প্রকৃত মহান কর্ম কি না তাহা পুলিশের রিপোর্ট জনগণের সম্মুখে আসার পরই প্রতীয়মান হইবে। ছিচকে চোর যদি চুরির নিমিত্তে পুলিশের হাতে উত্তম-মধ্যম লাভ করে এবং পূর্বের জনকল্যাণমূলক কাজের জের হিসেবে প্রকাশ করে, তাহা জনগণ কিছুদিন বিশ্বাস করিলেও পরে আসল সত্য প্রকাশ হইয়া যায়। এক সময়ের বঙ্গবীর পরে তস্করে পরিণত হইতে পারে, এবং পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হইতে পারে। ইহা কোনরূপেই জনকল্যাণের নিমিত্তে গ্রেপ্তার হইতে পারে না। জনগণের যানবাহন ভাঙচুর, পথ চলাচলে বাধার সৃষ্টি করার কারণে গ্রেপ্তারকে কেউ সুকৌশলে জনকল্যাণের কারণে প্রতিহিংসামূলক গ্রেপ্তার বলিয়া প্রচার করিতেই পারে, কারণ থানায় পুলিশের সাথে প্রকৃত কি ঘটনা ঘটিয়াছিল তাহা এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালেই রহিয়াছে। যে কোন ভাল গল্পকার কোন গোপন ঘটনাকে ইচ্ছা মতন কল্পনার নিরিখে সাজাইতে পারে। আসল ঘটনার প্রকাশ পাইবে যদি ঠাকুর ঘরে কে রে বলার সাথে সাথেই কেউ আমি কলা খাইনি বলিয়া চিৎকার করিতে থাকে...

No comments:

Post a Comment