Sunday, September 15, 2013

ছোট্ট বাবুদের ফটোগ্রাফির সহজ পাঠ - ৪

বাবুরা সবাই কেমন আছ? তোমাদের উপর আমি বেশ ডিজাপয়েন্টেড। তোমরা কেউ কোন ছবি আমাকে দেখালে না... অমি ভেবেছিলাম, আমি আর লিখব না, কিন্তু তারপর মনে পড়ল, আমার লিখা গুলো আগে প্রায় পুরোটাই লিখেছিলাম, ফিল্ম ক্যামেরার কথা ভেবে। কিন্তু এখন আর ফিল্ম ক্যামেরা মিউজিয়ামে ছাড়া কোথাও ইউজ হয় না।

তাই আজ, থেকে স্পেসিফিক-লি ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে লিখব। কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে লিখতে গেলে আগে জানতে হবে, ডিজিটাল ক্যামেরা সম্পর্কে। তাই, আজ শুধুমাত্র ক্যামেরা পরিচয় চলবে।


যারা মিস করেছ, আগের পোস্টগুলো নিচে লিংক দিলাম -



পার্টস-পাতি


ডিজিটাল ক্যামেরার যন্ত্রপাতি প্রচণ্ড জটিল। সবগুলো সম্পর্কে আমিও ভালমতো জানি না। ক্যামেরাতে যা যা থাকে, সেগুলোর মধ্য থেকে মোটামুটি ইম্পর্টেন্টগুলোর একটা বেসিক ওভারভিউ দিয়ে শুরু করি,


বডিঃ 
ক্যামেরার বডি ডিজাইন নিয়ে আমরা তেমন মাথা ঘামাই না। কিন্তু, একটা গল্প দিয়ে এটা শুরু না করলে জমছে না। 

আমি আগে একটা ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট পড়াতাম। সে প্রতিদিনই প্রায় দেড় দুই ঘণ্টা পর পরই প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করত। আপলোডের কথা বাদই দিলাম। সেই হিসেবে, তার দিনে এটলিস্ট মিনিমাম ১২ টা ছবি লাগত। আমাদের সব ছবি তো আর ভাল আসে না, ৩-৪ টার পর একটা প্রোফাইলে দেবার মতো ছবি হয়। ৫০% ইফিসিয়েন্সি ধরলেও দিনে তার ২৪ টা ছবি তুলতে হইত। তো সেই ছবি তুলতে নিশ্চয়ই সারাদিন সাথে ক্যামেরা রাখা লাগত।

সারাদিন ক্যামেরা হাতে রাখলে, তখনই বডি ডিজাইন কত জরুরী সেটা বোঝা যায়। প্রথমেই বলা যায়, কমফোর্ট আর ইউজে-বিলিটি ডিপেন্ড করে বডির উপর। ছোট সাইজের হাতে বড় সাইজের ক্যামেরা কিংবা বড় সাইজের হাতে ছোট ক্যামেরা হলে ছবি তুলতে অসুবিধা হবে। 

এছাড়া, বিভিন্ন বাটন গুলোর পজিশন ডিপেন্ড করে বডি আর সাইজের উপর। পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরায় বাটন থাকে অল্প, ৪-৫ টা। কিন্তু ডি,এস,এল,আর, ক্যামেরা (যেমন Canon Rebel series, Mark 2) অনেক বাটন থাকে বিভিন্ন সেটিং কন্ট্রোলের জন্য। তখন এমনভাবে বডি ডিজাইন করা হয়, যেন সবচে ইম্পরট্যান্ট কন্ট্রোল বাটনগুলো খুব সহজেই টিপাটিপি করা যায়। যদিও সব ক্যামেরা প্রায় একই রকম, কিন্তু, একটু ডিফারেন্ট বডি ডিজাইনের কারণে, ব্যাবহারের সময় আকাশ-পাতাল পার্থক্য তৈরি হতে পারে। 

তো, তোমাদের মধ্যে কেউ ক্যামেরা কিনতে গেলে, আমার সাজেশন থাকবে, স্পেসিফিকেশন দেখেই কিনে না ফেলে, বরং হাতে নিয়া কয়েকটা ছবি তুলে, সেটিং গুলো ঘাটাঘাটি করে, যেটা সবচে আরাম, সেটা কেনা ভালো হবে।


লেন্সঃ 
লেন্স হল ক্যামেরার চোখ। তবে এটার উপর আলাদা বই লিখে ফেলা সম্ভব। আর লেন্স নিয়ে তখনই বেশি মাথা ঘামাতে হয় যখন ক্যামেরাটা হয়, ডি,এস,এল,আর, ক্যামেরা। প্রথমে জেনারেল সব ক্যামেরার ক্ষেত্রেই বলা যায়, মেইন ডিফারেন্স হল, জুম লেন্স আর প্রাইম লেন্স। জুম লেন্স মানে যে লেন্স জুম করা যায়। গুলা একটু বেশি দামি, ভারি আর বড় হয়। প্রাইম লেন্সে কোন জুম হয় না। কিন্তু দাম কম, হালকা আর ছোট হয়। প্রায়ই দেখা যায়, প্রাইম লেন্সে জুম লেন্সের চেয়ে একটু শার্প ছবি আসে। কিন্তু, যখন হাজার হাজার টাকা লেন্সের পেছনেই ঢালব, তখন আবার এই ডিফারেন্সটা প্রায় গায়েব হয়ে যায়।

এবার বলা যায়, ভিন্ন ভিন্ন লেন্স-টাইপের কথা। যেমন ওয়াইড এঙ্গেল, স্ট্যান্ডার্ড, মিডিয়াম আর টেলি-ফটো লেন্স। (আলট্রা টেলি-ফটো আর আলট্রা ওয়াইডও আছে কিন্তু লিখছি না)। এই ডিফারেন্সগুলা মূলত ফোকাল লেংথের উপর ডিপেন্ড করে। যেটা নিয়া লিখতে গেলে হাজার পাতা ছাড়িয়ে যাবে। (বেশি জানার ইচ্ছে হলে গুগোল আছে)।

ওয়াইড এঙ্গেল লেন্সগুলো সাধারণত সেই লেন্স যেগুলোর ফোকাল লেংথ ৩৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়। যতো বেশি ওয়াইড, (ততো কম ফোকাল লেংথ) লেন্স ততো বেশি দেখতে পায়। কিছু কিছু স্পেশাল ওয়াইড লেন্স ৮-১০ মিলিমিটার ফোকাল লেংথেরও হয়, (সম্ভবত ফিস আই লেন্স বলে)। নরমালি ওয়াইড লেন্স ১৪-২৮ মিলিমিটারের হয়। ওয়াইড লেন্স অনেক বেশি যায়গা কভার করে, আর কিছুটা স্পেস ডিসটর্সন ঘটিয়ে ছবিতে  স্ফেরিকাল ভাব আনে আর ডেপথও একটু বেশি লাগে। 

স্ট্যান্ডার্ড লেন্স মূলত ৩৫ থেকে ৫০ মিলিমিটারের হয়। মানুষের চোখ যেভাবে দেখতে পায়, সেটার সবচে কাছাকাছি হল স্ট্যান্ডার্ড লেন্স। সবচে বেশি ভার্সেটাইল লেন্স এটা সেই সাথে কোয়ালিটির দিক থেকে এরচে অনেক দামি জুম-লেন্সের সাথে টেক্কা দিতে পারে। কিন্তু একটা ছোট্ট জায়গাতে একটু ওয়াইড এরিয়া কভার করতে চাইলে কিংবা সাবজেক্টের চেয়ে বেশি দুরে থাকলে এই লেন্স আর কোন কারিশমা দেখাতে পারে না।

মিডিয়াম লেন্স সাধারণত ৬০-১০০ মিলিমিটারের হয়, এবং কিছু স্পেসিফিক কাজ ছাড়া ব্যবহার হয় না বললেই চলে। সাধারণত, এগুলো জুম-লেন্সেই বেশি পাওয়া যায়। 

টেলি-ফটো লেন্স হয় ১০০ মিলিমিটারের উপরের হয়। (৪০০ মিলির উপরে আলট্রা টেলি-ফটো) সিরিয়াস লেভেলে জুম ছবি তুলতে ইউজ হয়। ওয়াইড লেন্স যেমন ছবিতে ডিসটর্সন এনে ডেপথ বাড়ায়, টেলি-ফটো লেন্স ছবি ফ্ল্যাট করে দেয়। এই লেন্সে ছবি ব্লার হওয়া (হত কাঁপলে) সবচে বেশি হয়। আর অল্প আলোতে পারফর্মেন্স খারাপ।



সেন্সরঃ 
টেকনোলজি ফিল্ড এখন এত এগিয়ে গেছে যে ক্যামেরার সিপিইউ নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলে। কিন্তু সেন্সরই আসলে ডিজিটাল ক্যামেরার প্রাণ। এটা ফিল্ম ক্যামেরার ফিল্মের মত। মেইনলি সেন্সর সাইজের উপর ক্যামেরার মান নির্ভর করে। নরমাল ক্যামেরার ক্ষেত্রে সেন্সর এমনিতেই ছোট হয়। আর সে ক্ষেত্রে সাইজটা একটা ছোট ফ্যাক্টর। কিন্তু ডি,এস,এল,আর, কিংবা এস,এল,টি, (সনির) কিংবা এই টাইপের ক্যামেরার ক্ষেত্রে এটা একটা বিশাল ব্যাপার।

ম্যাক্সিমাম ডি,এস,এল,আর, ক্যামেরায় যে সাইজের সেন্সর থাকে, সেটাকে এপিএস-সি বলে। উইকিতে গেলে সাইজের আরও ভালো আইডিয়া আসবে, http://en.wikipedia.org/wiki/Image_sensor_format।  এটা ৩৫ মিলিমিটার ফিল্মের প্রায় অর্ধেক সাইজের। আর সব লেন্সেই এটা ১.৬x ম্যাগনিফিকেশন এড করে। এর মানে, এই সাইজের সেন্সর ওয়ালা ক্যামেরায় ৩৫ মিলিমিটার ফোকাস ওয়ালা একটা লেন্স ইউজ করা আর ফিল্ম ক্যামেরায় (৩৫ মিলিমিটার) ৫৬ মিলিমিটার ফোকাসের লেন্স ইউজ করা সমান কথা। এটা টেলি-ফটো লেন্সের জন্য ভাল, কিন্তু ওয়াইড লেন্সর জন্য ভালো না। কারণ, এপিএস-সি সেন্সরের এ্যডে যেমন বলে তেমন ওয়াইড সাধারণত হয় না। সেক্ষেত্রে দেখা যাবে, ১০ মিলিমিটারের ফিস লেন্স তখন ১৬ (কম ওয়াইড) মিলিমিটারের লেন্সের মত কাজ করবে।

একটু দামি (আসলে একটু ভালো মানের) ডি,এস,এল,আর, ক্যামেরায় ফুল ফ্রেম সেন্সর (৩৫ মিলিমিটারের সবচে কাছাকাছি) থাকে, এটাই সবচে বেস্ট।

এবার একটা মন ভেঙ্গে দেবার মতো টেকনিকাল সিক্রেট বলি। একটা সেন্সরে যতো বেশি মেগাপিক্সেল প্যাক করা থাকে, ছবিতে ততো বেশি নয়েজ হয়। এই কারণে, বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা চয়েস না করাটাই ভালো স্পেশালি যখন সেন্সরটা ছোট (কমপ্যাক্ট পয়েন্ট এন্ড শুট, মোবাইল ক্যামেরা)। সাধারণত ৬.৩ মেগাপিক্সেলই সবার জন্য এনাফ আর ৮-১০ মেগাপিস্কেল মোর দ্যান এনাফ হওয়া উচিত। কারণ যতো বেশি মেগাপিক্সেল ততো খারাপ ছবি। মুহাহাহাহাহাহাহাহা.....


মেমরি কার্ডঃ 
কার্ডের কথা আর কি কইতাম? সবাই জানে, ক্যামেরায় হাইয়েস্ট কত সাপোর্ট করে এটা মিলাইয়া  যতো বেশি গিগাবাইট ততোই ভালু... জ্বী না, তোমগো জানায় ভুল আছে। কার্ডের স্পিড একটা বিশাল ফ্যাক্টর। আসলে যতো বেশি স্পীড তত ভালো। কারণ, ক্যামেরায় একটার পর একটা ছবি তুলার পর মাঝে মধ্যে একটা দুইটা ছবি আসে অর্ধেক সাদা/কালো কিংবা র‍্যাক র‍্যাক দাগ আছে। 

আসলে কার্ডে একটা ছবি রাইট করে শেষ করতে না করতেই সেকেন্ড ছবি তোলা হইসে, আর আগেরটা করাপ্ট হয়ে গেছে। কার্ডের গায়ে অথবা কার্ডের প্যাকেটে ক্লাস লিখা থাকে (নন ব্রান্ড কিংবা বাজে কার্ডে, নকল কার্ডে সাধারণত থাকে না)। 

ক্লাস যতো হাই, ততো বেশি স্পিড। আইডিবি খুঁজে আমি ক্লাস ৪ এর উপরে পাই নাই। কিন্তু ক্যামেরা দিয়া এইচডি ভিডিও করতে এটলিস্ট ক্লাস ৬ লাগেই। তবে বেস্ট হল ক্লাস ১০ কিন্তু, যদি মেমরি কার্ডটা কমপ্যাক্ট ফ্ল্যাশ কার্ড হয়, তাইলে ২৩৩x কিংবা বেশি হলে ভালো। এটলিস্ট রাইট স্পিড ১৫ মেগাবাইট/সেকেন্ড বা তার বেশি হলে ভাল।


ব্যাটারিঃ 
এইটার ব্যাপারে কিছু বলার নাই। পারলে একটা,দুইটা এক্সট্রা রাখলে লাভ ছাড়া কোন ক্ষতি আমি দেখি নাই। ক্যামেরার এলসিডি ইউজ না করে, বন্ধ রেখে ভিউফাইন্ডার দিয়ে ছবি তুলে চার্জ বেশি থাকবে। ফ্ল্যাশ ইউজ না করলে বেশিক্ষণ চার্জ থাকবে। আর কিছু কি বলার দরকার আছে???


আর কি বাকি?

প্রসেসরের কথা চিন্তা না করলেও হব বলেছি, কিন্তু যদি এটা সাতটার বেশি RAW ফ্রেম প্রসেস করতে পারে (বিশটা জেপিইজি) তাইলে কুনোদিন সোলো মনে হপে না। আর ফ্ল্যাশের কথা আমি এমনিতেও বলতে পারব না। আমি এটা একটু কম বুঝি। আমার শখ লো-লাইট।

তাইলে আজকে একটা বিশাল পোস্ট পুস্টাইলাম। তোমরা এইবার মনের সুখে ছবি তুলেতে থাকো, নেক্সট পোস্ট কবে দিব জানি না। কিন্তু কিছু ছবি দেখার আগে যে দিব না, সিটা কনফার্ম। তাই, নেক্সট পোস্ট পাইতে, ছবি আপলোডাও। হ্যাপি প্রো-পিক-ইং...