Skip to main content

অর্বচীন পণ...

ছেলেবেলায় ক্লাস টু থেকে কমিকস, থ্রি থেকে গল্পের বইয়ের নেশা। তখনই সাহিত্যের জগতে পদচারণার হাতেখড়ি। এরপর একটু বড় হয়ে, সাইকেল আর গীটার জুটল ক্লাস সিক্সে, ঘোরাফেরা আর সুর, সঙ্গীত এর জগতে চলার শুরু। সেভেনে এসে হাতে পেলাম একটা আধা অটোমেটিক ক্যামেরা। সেই শুরু ফটোগ্রাফির। ডাইরি লিখা শুরু ক্লাস ফাইভ থেকেই। সেটা চলছে, গান-গীটার চলছে, ফটোগ্রাফি চলছে আর চলছে সাইকেলে ভর করে পুরোটা শহর ঘুরে বেড়ানো।
এর মাঝে ইন্টারনেট এলো। কম্পিউটার তার আগে থেকেই ছিল। লিখালিখি তখনও আটকে ছিল ডায়রিতেই। তবে গানটা কিছুটা ছড়িয়ে গেল। গাইতাম, লিখতাম, সুর করতাম। আড্ডাবাজি আর ঘুরে বেড়ানর মুল উদ্দেশ্য ছিল মানুষ দেখা, বুঝতে চেষ্টা করা। তাদের ভাবনা, আবেগ এগুলোকে কলমে ধরে রাখার চেষ্টা ছিল।
এভাবে চলতে চলতেই বড় হয়ে ওঠা। কখন যে ছেলেবেলা পার হয়ে বড় হয়ে গেছি টেরই পাইনি।
অনেক কাল পরে একদিন শুনলাম, নতুন একটা জিনিস এসেছে, ব্লগ। ওয়েব, লগ থেকে ব্লগ। ডায়েরির লিখা ইন্টারনেটের দুনিয়ায় উন্মুক্ত করে দিলে, সেটা হয় ব্লগ। খুললাম একাউন্ট, ব্লগার ডট কম-এ। লিখালিখি বলতে সেই দৈনন্দিন ডাইরির পাতাগুলোই এখন লিখার বদলে টাইপ হতে থাকলো। এর নতুন কোন গান বাধলেই সেটা দিতাম।
আরও কিছুটা বড় হলাম। এর পরে জানলাম বাংলা কমুনিটি ব্লগ বলেও কিছু একটা আছে। সেখানেও লেখালিখি শুরু করলাম। সেই একই জিনিস, কোন গল্প, নাহলে গান। এভাবেই চলছে, সেই সাথে গান গল্প নিয়ে আলোচনায় মেতে ওঠা পাঠক ও অন্যান্য লেখকদের সাথে। একইসাথে ফেসবুকও ব্যক্তিগত লেভেল থেকে সরে গিয়ে এমন একটা কমুনিটি লেভেলে চলে গেছে।
এর কিছুদিন পরে এলো শাহবাগের উত্তাল দিন। অনেক কিছুই বদলে গেল হটাৎ করে। জানলাম, লিখার জন্য মানুষ খুন হওয়া খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। আমি লিখালিখি করি স্রেফ এটুকু জেনেই, যে মানুষগুলা আমার লিখার এক বর্ণও পরে নাই, তারাও এখন কেমন কেমন করে তাকায়।
প্রথমে খুন হল, থাবা বাবা। এর পরে হল অভিজিৎ দা। এতদূর পর্যন্ত আমার আশেপাশের মানুষ গুলা দারুণ একটা সুশীল ভাব নিয়ে হায় হায় করছিল। কিছুটা মেনেও নিয়েছিলাম। এর পরে খুন হল ওয়াশিকুর বাবু। এর পরে সবচে মজার ব্যাপারটা চোখে পড়ল।
খুনি দুইজনের স্বীকারোক্তি, তারা কখনো ব্লগ পড়ে নাই। ওয়াশিকুর-এর লিখাও পড়ে নাই। ওয়াশিকুর আদৌ ব্লগ লিখতো নাকি সেটাও তারা আসলে জানে না। তবুও ঈমানী দায়িত্ব থেকে খুন করে ফেলেছে একটা মানুষ কে।
আমার খুব কাছের কিছু মানুষ, উপদেশ দেয়া শুরু করলো, লিখালিখি বন্ধ কর। আমার খুব কাছের একজন খুব করে ধরলেন, তুমি তো লিখালিখি কর, এগুলা বন্ধ কর, তোমার উপর অনেক দায়িত্ব... হ্যান... ত্যান... তকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি লিখি এটা জানেন, কখনও আমার লিখা পড়েছেন? তার সরল জবাব, "না"।
তো, ভেবে দেখলাম, যদি না পড়েই কাউকে খুন করা যায়, তবে, আমি লিখালিখি বন্ধ করলেই কি খুন হওয়া থেকে বেচে যাব? আমাকে কেউ ঈমানী দায়িত্ব থেকে মারবে না, সেই ভরসা কি? আমার লিখাও তো কেউ পড়ে না। আমি যেই গান আর কবিতা গুলা পোস্ট দেই, সেগুলো বন্ধ রাখলে খুন হওয়া থেকে বেচে যাব?
আমার লিখা না পড়েই আমাকে কোন একটা কাতারে ফেলে, লিখালিখি বন্ধ করতে বলা আপনার সাথে ঐ দুই ধরা পড়ে যাওয়া খুনির আসলে পার্থক্য-টা কি? আপনি ওয়ার্নিং দিচ্ছেন, আর তারা ওয়ার্নিং-এর পর খুন করে ফেলেছে, এর বাইরে আমি আর কোন পার্থক্য তো দেখতে পাচ্ছি না। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই লিখা বন্ধ করতে বলা আলগা কনসার্ন দেখানো মানুষদের, আর ঐ খুনিদের মেন্টালিটি একই।
তারা অনেকেই খেপে যাবে এই কথা শুনে, কিন্তু এই টাইপের মানুষ যতদিন এই দেশে থকবে, এমন খুন হতেই থাকবে। কারণ, এই মনুষ্যগুলাই আসল খুনি। আর এই কারণেই আমিও আর খুনিদের উপদেশ শুনতে বধ্য নই। যদি পারি, তারা যেই লিখা লিখি মনে করে আমাকে নিষেধ করছে, সেই টাইপের লিখাও লিখব। এখন থেকে লিখব। নিয়মিতই লিখব। দেখা যাক, আর কতো রক্ত দেখলে, তাদের সুশীলতার সম্ভ্রম রক্ষা হয়...

Comments

Popular posts from this blog

দুঃসময় বা দুঃস্বপ্নের সময়...

কেন যেন মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্ন দেখছি, আর প্রচন্ড অসহায় হয়ে চাচ্ছি, কেউ আমার ঘুমটা এক ঝটকায় ভেঙ্গে দিক। দুঃস্বপ্নের শুরু মায়ের অসুস্থতা দিয়ে। এখান ওখান করে শেষ পর্যন্ত কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৌছালাম, ইমারজেন্সি-তে ওদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতেই মেইল এল, আম্মার COVID-19 পজিটিভ। সব ভয় ভুলে, চলে গেলাম রোগি ভরা ওয়ার্ডে, বেডে শুইয়ে দিলাম, ডায়ালাইসিস করে দিলাম। চলে আসার সময়, একবার মনে হল, এর পর আর দেখা হবে না। দু'দিন পর, ICU তে যায়গা পাওয়ায়, একটু নিশ্চিন্তে অফিসের একটা মিটিং এ জয়েন করলাম। মাঝামাঝি সময় ফোন এল, আম্মু সব চিকিৎসার বাইরে চলে গেছে, আম্মুকে নিয়ে আসতে হবে। সেদিন সেপ্টেম্বরের ৩০, ২০২০। ঈদের আর দুদিন বাকি। পরদিন বানানি কবরস্থানে মাটি চাপা দিলাম। সেই সময় প্রচন্ড বৃষ্টি, আগের দিন থেকেই স্বাভাবিকভাবেই চলছিলাম, কিন্তু কেন যেন এখন আর পারলাম না, সকল আত্মসংযমের বাধ ভেঙ্গে চুরে, বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে কান্না এল।  বৃষ্টির পানি, মুখের মাস্ক, পিপিই সব মিলে সেই চোখের পানি লুকিয়েই ছিল হয়তো, খেয়াল করা হয়নি। বা সেই অবস্থায় ও ছিলাম না।  এর পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন, বাসার সবার। এর মাঝেই বাবার পাতলা পায়খা...

জেনারেশন গ্যাপ

জেনারেশন এ পরিবর্তন আসে অবশ্যম্ভাবী হয়ে। এর কোন ব্যতিক্রম নাই। কেউ চাক বা না চাক এই প্রক্রিয়া চলবেই। ভাল লাগুক বা মন্দ লাগুক কেউ সময় কে থামাতে পারবে না। এর মধ্যে বিতর্ক এসে যায় ভাল পরিবর্তন আর মূল্যবোধের নিম্নগামীতা নিয়ে। কিন্তু আমি সেসব নিয়েও কথা বলছি না। আমি বলছি কারণ যুগে যুগে সব মানুষের অপ্ত বাক্য ‘ দুনিয়াটা রসাতলে গেল ’। আমার দাদা আমার দাদী কে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং তার মৃত্যুশোকে সন্ন্যাসী হন। তিনি তখন অবশ্য ছিলেন যুব-সমাজ রসাতলে যাবার অন্যতম উদাহরণ। এখন অবিশ্বাস্য লাগতেই পারে কিন্তু তখন কেউ তাকে ছেড়ে কথা বলেনি। আমার বাবা রবীন্দ্র সঙ্গীত এর ভীষণ ভক্ত ছিল কিন্তু তার সময় এটা ছিল সঙ্গীত এর নামে অশ্লীলতা। আব্বুকেও সিনেমা হলে সিনেমা দেখাতে যাবার জন্য অসংখ্যবার শুনতে হয়েছে যুব-সমাজ রসাতলে গেল। এসব সিনেমা কে এখন আমরা আর্ট পিস এর সম্মান দেই। এখন সবার গা-জ্বালা করা একটা সর্বনাম হল ডিজুস জেনারেশন বা আধুনিক ইয়ো পোলাপান। সবার মত অনুযায়ী তাদের কোন শেকড়ই নাই এবং এরা অন্ধভাবে পশ্চিমা সভ্যতা অনুকরণ ও অনুসরণ করে। কিন্তু সময় যখন সব বদলায় তখন সময় এর সাথে যুদ্ধ করা; আমি ঠিক কিন্...

Personal notes on my Transition form Windows to Linux - Part 1 : Prolouge

Deciding to move to Open-source/Free software and Linux for everyday task is not a small decision. Especially when living in Bangladesh where almost 80% of the people still uses ASCII font based system for typing Bangla language, paying for software is a very remote idea which happens to only to the “Other people”.