Tuesday, April 28, 2015

ভুল সময়ে ভুল স্বপ্ন



মাঝে মাঝে, জেগে উঠতে ইচ্ছে করে।
ইচ্ছে করে, গা ঝাড়া দেই,
হাটতে থাকি।...

ছকে বাধা বেচে থাকা কাটিয়ে উঠি।
কাটিয়ে উঠি, আনমনা ভাব,
হারিয়ে থাকা...

ভুলে থাকার চেষ্টাটাকে ভুলে গিয়ে,
ভালো থাকার প্রচেষ্টাটাও বন্ধ রেখে,
আঁকড়ে ধরি ভালো লাগার অনুভূতি,
আর একটি বার।

মাঝে মাঝে, ইচ্ছে গুলো উপচে পরে।
উপচে পরা ভাবনারা হয়
বিস্ফোরিত...

ভর করে এক অস্থিরতা,
সকল কাজে।
অস্বস্তিকর অনুভূতির সময়টুকু
এগোয় খুবই ধীর গতিতে।

পাঁচ মিনিটের বিরতিতে,
চায়ের জন্য কোনার দোকান,
নেই এখন আর আগের স্থানে।
পরিচিত মুখের এখন,
হয় না দেখা।

সময় লাগে, সামলে ওঠায়,
আমার আমায় সময় নিয়ে,
দিতে থাকি, শুধুই প্রবোধ।
সময় এখন বদলে গেছে।
বদলে গেছে জীবনপথের পটভূমি।
আগের মত একলা, একা,
নেই যে আমি।


জীবন মানে এখন শুধুই এগিয়ে চলা,
মাঝে মাঝে, আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখা,
একটু পরে, স্বপ্ন ভাঙ্গা।

তিন নম্বর কৃষ্ণচূড়ায় এখন যে আর
ফোটে না ফুল, তেমন করে,
আগুন রাঙ্গা।

- (১৫ই বৈশাখ, ১৪২২)




Thursday, April 23, 2015

একটি আত্মকাহিনী ২

তবুও প্রত্যাশা করি,
একদিন হবে দায়মুক্তি।
পাব ক্ষমা, পুরনো সময়,
আর...
সম্পর্ক।

এভাবেই বয়ে চলা
জীবন শুষে নেয়া বোধ,
একটু আশার দেখা পেতে,
তিলে তিলে মৃত্যুর পথে যাত্রা।
আসলে নির্দোষ নই
আমি এক পাপাচারী বলছি।

- (২৬শে ফাল্গুন, ১৪২১)

Wednesday, April 08, 2015

অর্বচীন পণ...

ছেলেবেলায় ক্লাস টু থেকে কমিকস, থ্রি থেকে গল্পের বইয়ের নেশা। তখনই সাহিত্যের জগতে পদচারণার হাতেখড়ি। এরপর একটু বড় হয়ে, সাইকেল আর গীটার জুটল ক্লাস সিক্সে, ঘোরাফেরা আর সুর, সঙ্গীত এর জগতে চলার শুরু। সেভেনে এসে হাতে পেলাম একটা আধা অটোমেটিক ক্যামেরা। সেই শুরু ফটোগ্রাফির। ডাইরি লিখা শুরু ক্লাস ফাইভ থেকেই। সেটা চলছে, গান-গীটার চলছে, ফটোগ্রাফি চলছে আর চলছে সাইকেলে ভর করে পুরোটা শহর ঘুরে বেড়ানো।
এর মাঝে ইন্টারনেট এলো। কম্পিউটার তার আগে থেকেই ছিল। লিখালিখি তখনও আটকে ছিল ডায়রিতেই। তবে গানটা কিছুটা ছড়িয়ে গেল। গাইতাম, লিখতাম, সুর করতাম। আড্ডাবাজি আর ঘুরে বেড়ানর মুল উদ্দেশ্য ছিল মানুষ দেখা, বুঝতে চেষ্টা করা। তাদের ভাবনা, আবেগ এগুলোকে কলমে ধরে রাখার চেষ্টা ছিল।
এভাবে চলতে চলতেই বড় হয়ে ওঠা। কখন যে ছেলেবেলা পার হয়ে বড় হয়ে গেছি টেরই পাইনি।
অনেক কাল পরে একদিন শুনলাম, নতুন একটা জিনিস এসেছে, ব্লগ। ওয়েব, লগ থেকে ব্লগ। ডায়েরির লিখা ইন্টারনেটের দুনিয়ায় উন্মুক্ত করে দিলে, সেটা হয় ব্লগ। খুললাম একাউন্ট, ব্লগার ডট কম-এ। লিখালিখি বলতে সেই দৈনন্দিন ডাইরির পাতাগুলোই এখন লিখার বদলে টাইপ হতে থাকলো। এর নতুন কোন গান বাধলেই সেটা দিতাম।
আরও কিছুটা বড় হলাম। এর পরে জানলাম বাংলা কমুনিটি ব্লগ বলেও কিছু একটা আছে। সেখানেও লেখালিখি শুরু করলাম। সেই একই জিনিস, কোন গল্প, নাহলে গান। এভাবেই চলছে, সেই সাথে গান গল্প নিয়ে আলোচনায় মেতে ওঠা পাঠক ও অন্যান্য লেখকদের সাথে। একইসাথে ফেসবুকও ব্যক্তিগত লেভেল থেকে সরে গিয়ে এমন একটা কমুনিটি লেভেলে চলে গেছে।
এর কিছুদিন পরে এলো শাহবাগের উত্তাল দিন। অনেক কিছুই বদলে গেল হটাৎ করে। জানলাম, লিখার জন্য মানুষ খুন হওয়া খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। আমি লিখালিখি করি স্রেফ এটুকু জেনেই, যে মানুষগুলা আমার লিখার এক বর্ণও পরে নাই, তারাও এখন কেমন কেমন করে তাকায়।
প্রথমে খুন হল, থাবা বাবা। এর পরে হল অভিজিৎ দা। এতদূর পর্যন্ত আমার আশেপাশের মানুষ গুলা দারুণ একটা সুশীল ভাব নিয়ে হায় হায় করছিল। কিছুটা মেনেও নিয়েছিলাম। এর পরে খুন হল ওয়াশিকুর বাবু। এর পরে সবচে মজার ব্যাপারটা চোখে পড়ল।
খুনি দুইজনের স্বীকারোক্তি, তারা কখনো ব্লগ পড়ে নাই। ওয়াশিকুর-এর লিখাও পড়ে নাই। ওয়াশিকুর আদৌ ব্লগ লিখতো নাকি সেটাও তারা আসলে জানে না। তবুও ঈমানী দায়িত্ব থেকে খুন করে ফেলেছে একটা মানুষ কে।
আমার খুব কাছের কিছু মানুষ, উপদেশ দেয়া শুরু করলো, লিখালিখি বন্ধ কর। আমার খুব কাছের একজন খুব করে ধরলেন, তুমি তো লিখালিখি কর, এগুলা বন্ধ কর, তোমার উপর অনেক দায়িত্ব... হ্যান... ত্যান... তকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি লিখি এটা জানেন, কখনও আমার লিখা পড়েছেন? তার সরল জবাব, "না"।
তো, ভেবে দেখলাম, যদি না পড়েই কাউকে খুন করা যায়, তবে, আমি লিখালিখি বন্ধ করলেই কি খুন হওয়া থেকে বেচে যাব? আমাকে কেউ ঈমানী দায়িত্ব থেকে মারবে না, সেই ভরসা কি? আমার লিখাও তো কেউ পড়ে না। আমি যেই গান আর কবিতা গুলা পোস্ট দেই, সেগুলো বন্ধ রাখলে খুন হওয়া থেকে বেচে যাব?
আমার লিখা না পড়েই আমাকে কোন একটা কাতারে ফেলে, লিখালিখি বন্ধ করতে বলা আপনার সাথে ঐ দুই ধরা পড়ে যাওয়া খুনির আসলে পার্থক্য-টা কি? আপনি ওয়ার্নিং দিচ্ছেন, আর তারা ওয়ার্নিং-এর পর খুন করে ফেলেছে, এর বাইরে আমি আর কোন পার্থক্য তো দেখতে পাচ্ছি না। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই লিখা বন্ধ করতে বলা আলগা কনসার্ন দেখানো মানুষদের, আর ঐ খুনিদের মেন্টালিটি একই।
তারা অনেকেই খেপে যাবে এই কথা শুনে, কিন্তু এই টাইপের মানুষ যতদিন এই দেশে থকবে, এমন খুন হতেই থাকবে। কারণ, এই মনুষ্যগুলাই আসল খুনি। আর এই কারণেই আমিও আর খুনিদের উপদেশ শুনতে বধ্য নই। যদি পারি, তারা যেই লিখা লিখি মনে করে আমাকে নিষেধ করছে, সেই টাইপের লিখাও লিখব। এখন থেকে লিখব। নিয়মিতই লিখব। দেখা যাক, আর কতো রক্ত দেখলে, তাদের সুশীলতার সম্ভ্রম রক্ষা হয়...