Sunday, May 27, 2012

মহান হবার ফর্মুলা আবিষ্কারের গল্প... দ্বিতীয় পর্ব - সেনাজীবন


দ্বিতীয় পর্ব - সেনাজীবন


প্রথম পর্বের পর - 
~~~

চারিদিকেই কেমন যেন যুদ্ধের সাজ সাজ রব। ১৫ ইঞ্চির দুনিয়ার সবাই নাড়ে-চড়ে বসছে। নতুন একটা পেজ চালু হচ্ছে। ভাইয়া তাতে সমর্থন দিয়েছেন। ভাইয়ার সমর্থনের কারণে এ পেজের জনপ্রিয়তা হুহু করে বাড়ছে, জোয়ারের স্রোতের মতন। এই পেজটা হবে ছাগুদের উপর একটা চরম ব্লো। "পারলে আরেকটা লেইখ্যা দেখা" চ্যালেঞ্জের জবাব দিতেই এই পেজ। আমার প্রেমিকার উৎসাহ তখন তুঙ্গে। ওর কথা হল, এখন আর কাঁচুমাচু করে লাভ নাই। ভাইয়া বলছে, সবারই উচিৎ নিজের অস্তিত্বের কথা জানান দেয়া। আসলেই তো তাই হওয়া উচিৎ, তাই না? ধার্মিক পাবলিক যেই পরিমাণে আক্রমণাত্মক, কিছু হলেই কল্লা নামাইতে চলে আসে, আমাদেরও উচিৎ অফেন্সে যাওয়া। কাপুরুষ হয়ে একশ দিন বাচার চেয়ে বাঘের মত একদিন বাচা উচিৎ। ভাইয়ের ডাকে, আমাদের বিপ্লবী চেতনা জেগে উঠছে, রক্ত গরম করা সব স্ট্যাটাস ছাড়ছেন ভাইয়া।

শুরু হল এট্যাক। প্রথম আক্রমণের ধারা দেখে আমি মুগ্ধ। মেধা আছে বটে। মাতৃত্বের বাণী এলো, মানবতার বাণী এলো, দৈনন্দিন জীবন এর গল্প এলো, হাসি-ঠাট্টার গল্প হল... আর সেই সাথে আবেগী ভাষণ। আমার প্রেমিকা তো আগে থেকেই টগবগ করে ফুটছে, আমার রক্তও ফুটতে শুরু করল। প্রতিদিন আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণ চলছে কমেন্ট-সৈনিকদের মাঝে। যে সব রুকি বাচ্চা-কাচ্চা আছে, তারা হাত-পা ছোড়াকেই যুদ্ধ ভেবে সেটাই করছে। মোটকথা সবাই কোন বা কোন ভাবে, কিছু না কিছু করে অংশগ্রহণ করছে।

এভাবেই কাটল প্রথম মাস। টানটান উত্তেজনা ভাব কেমন স্তিমিত হয়ে এসেছে। প্রকৃত যোদ্ধারা আরও নানা মিশনে ব্যস্ত। তাদের অভাবে সব রুকিগুলোকেই ফ্রন্ট লাইনে আসতে বাধ্য করা হল। আমিও তখন পর্যন্ত নিজকে রুকি ভাবি। আর কিছুই না করতে পারার ক্ষোভে আঙ্গুল কামড়াই। যুদ্ধের পরিস্থিতি খুব বেশি আশাব্যঞ্জক নয়। নিজেদের সেই উদ্দীপনা হারিয়ে, অবসাদ ভর করেছে। আমরা নিজেরাই কেমন যেন ক্লান্ত, এটার জন্য নিজেদের দায়ী করা ছাড়া আর কাকেই বা দোষ দিব? বিজয় দিবস খুব কাছে চলে এসেছে আর সেই সাথে কেন যেন মনে হচ্ছে আমাদের পরাজয়ও।

ভাইয়া আবারও কলম ধরলেন। তেজ-দীপ্ত ভাষায় সবাইকে উৎসাহ দিলেন, সাহস দিলেন। সেই ভাষণ শুনে আমার প্রেমের আগুনে ভেজা তরুণ হৃদয়, রণাঙ্গনের বিজয়ী বীর হবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে টগবগ করে ফুসে উঠল। আমিও ঝাঁপিয়ে পরলাম যুদ্ধে। অগোছালো, এলোমেলো শব্দগুলোকে সাজিয়ে আমার প্রচেষ্টা ছোট্ট একটা কবিতার রূপে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হল। ভাবলাম, এই বিপ্লবের আগুন সবখানে ছড়িয়ে দেই। দিলাম...

অভূতপূর্ব সাড়া পেলাম। নিজের প্রশংসা শুনতে কে না ভালবাসে? আমারও অনেক মজা লাগল। সবচে বেশি ভাল লাগল এটা ভেবে, এতদিন ব্লগে আমি যাদের লেখা পড়ে ভাবতাম মানুষ কি ভাবে এত ভাল লিখে, তাদের মুখেই প্রশংসা। গর্বে ছাতি ৩ ফিট ফুলে গেল। আমি আবার ঝাঁপিয়ে পরলাম কমেন্টিংয়ে। কিন্তু এখন সাথে সাথে ব্লগেও প্রতিদিনই ঢু মারি। কেন যেন আগের আমার ভাবনাগুলোর সাথে এখানকার লোকগুলোর কথা মিলে যায়। তাই ভালোও লাগে। আর একটা ব্যাপার কেমন যেন মনের ভেতর খচ-খচ করছে। এখনও সেটি আমি প্রকাশ করিনি, কিন্তু মনের ভেতর কেমন অস্বস্তি বোধ করছি। আমার এটা পুরনো প্রবৃত্তি, বিপদের আশংকায় মনের গহীন কোন থেকে ইশারা। আমার মনে হচ্ছে কোথায় যেন একটা ফাঁক আছে, কিন্তু আমি সেটা ধরতে পারছি না। এই অস্বস্তি নিয়েই যুদ্ধ চালাচ্ছি, একটা সময় মনে হল, পুরো কাজটাই ভুল। আমরা যুদ্ধ করছি ঠিকই কিন্তু এর ফলাফল কি?

অদ্ভুত এক সমস্যা, কাজ করছি, জানিনা কাজের ফল কি হবে। হ্যাঁ এটা জানি উদ্দেশ্য কি, একটা চ্যালেঞ্জের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া। কিন্তু এটা জানিনা, এই দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে পারলে কি লাভ হবে। আমার মনে হচ্ছে না যে কারও মনে একটা প্রশ্নও জন্ম দিতে পেরেছি, আমার মনে হচ্ছে না যে কারও মনে এতটুকুও প্রভাব ফেলতে পেরেছি। আমার এই ধারনার কথা প্রেমিকাকে বললাম। সে প্রচণ্ড অবাক হল। "কি বল তুমি!!! আগে তো এথিস্টরা বলতেও ভয় পেত তারা এথিস্ট কিন্তু এখন তারা পাল্লা দিচ্ছে। নিজের কথা মাথা উঁচু করে বলতে পারছে, এটা-ইতো বিশাল ব্যাপার।" কিন্তু আমার সন্দেহ যায় না, নিজের কথা বলতে পারলে কি লাভ? তাতে কি কিছু বদলে যাচ্ছে? না, কিছুই বদলাচ্ছে না। সকল এথিস্ট এক-জায়গায় জড় হতে পারছে, নিজেদের ধ্যান-ধারনা শেয়ার করতে পারছে, মানুষ জানছে তারা এথিস্ট, কিন্তু, এতে লাভ কি হচ্ছে? নিজেদের ছাড়া কোথাও আমরা কি কোন পরিবর্তন আনতে পারছি? একটা সময় ছিল, হিপ্পিরা নিজেদের পরিচয় আলাদা করে বলতে শিখেছিল, কিন্তু তাতে তাদের কোন লাভ হয় নাই, কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। ব্যাস শুরু হয়ে গেল।
"আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল... তুমি আসলে নাস্তিক সাজ, কিন্তু তুমি আস্তিক..."

হটাৎ করেই খেয়াল করলাম ব্যাপারটা। আমাদের জীবন অনেকখানি বদলে গেছে...

হুট করেই উপলব্ধি হল, ১৫ ইঞ্চির এই স্ক্রিন কিভাবে আমাদের গ্রাস করে নিচ্ছে। বাস্তব দুনিয়া থেকে কতটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। আগেও আমাদের ঝগড়া হত, কিন্তু বিষয়বস্তু ভিন্ন ছিল। এখনকার ঝগড়ার বিষয় কোন একটা পোস্টে দ্বিমত। কেমন যেন নিজেকে খুব বোকা বোকা মনে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন বিষয়ে লেগে যাচ্ছে। আমাদের ধ্যান ধারনার এই বিষয় গুলো এত বড় কোন ইস্যু বলে মনে হয়নি কখনও। আমি কখনোই ভাবিনি ব্যক্তিগত ভাবনা আমার সম্পর্কের উপর এমন খুঁটি গেড়ে বসবে। কারণ আমি আস্তিক না নাস্তিক, আমি মুক্তমনা নাকি বদ্ধ-মনা, আমি সাম্যবাদী নাকি সাম্রাজ্যবাদী এসব কথা তো আমার দৈনন্দিন জীবনের অংশ না। মাসে-বছরে ২-১ বার আমার মত প্রকাশ হয়ে পড়ে, তাও বন্ধুদের আড্ডার ফাঁকে। আজ কেন তবে এটা এত বড় একটা ব্যাপার? কেন আমাদের সম্পর্কের ভিত্তিও এর উপরই দড়িয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে? আর যদি একই পথের পথিক আমরা হই তবে কেন সবাই একই ব্যাপারে এতটা ভিন্ন ধ্যান-ধারনা নিয়ে আছি? এতদিন ধরে গড়ে তোলা সম্পর্কটাকে, আমার জীবনটাকে, কেন যেন এই ১৫ ইঞ্চির স্ক্রিনের কাছে জিম্মি বলে মনে হচ্ছে।

থিওলজি বিষয়ে যখন আড্ডায় বন্ধুদের সাথে কথা বলি, কেউ কেউ হয়তো আমার কথা শুনে রেগে যায়, আর কেউ কেউ আমার প্রশ্ন, যুক্তিগুলো সিরিয়াসলি নেয়। প্রতি যুক্তি/জবাব খোজার চেষ্টা করে, তারপর তার কিছু সন্দেহ তৈরি হয়। এরপর থেকে কেউ তওবা করে নিজের কাজে মন দেয় আর কেউ কেউ আরও গভীরে যেতে চায়, কিছু নতুন ব্যাপার জনতে পারে, শিখতে পারে। এটাই ছিল আমার স্টাইল। আমার ধারনা ছিল এই ভাবেই একটা দর্শন ছড়িয়ে যায়। এই মুক্তচিন্তার প্লাটফর্ম আমাদের অগ্রগামীদের বহু বছরের প্রচেষ্টার ফসল। তিলে তিলে গড়ে তোলা একটি বিষয়। এখানে কোন কিছুই হটাৎ করে হয় নি। কারণ সমাজ কখনো এক দিনে বদলে যায় না, এর গতি অনেক ধীর-স্থির। এখন তবে কেন সবার এত তাড়া লাগল হটাৎ করে সব বদলে দেবার? সহযোদ্ধাদের সম্পর্কে একটু খোজ খবর করা উচিৎ বলে মনে হচ্ছে এখন।

জানতে পেলাম, এরা কেউই আমার পরিচিত মহলের না। এবার আমার অবাক হবার পালা! তবে এরা কারা? আমার প্রেমিকার ভাষ্য অনুযায়ী এরাই নতুন জেনারেশন। তখন মনে হল, আগে যারা ছিল, যারা আমদের পথ দেখিয়েছিলেন, তারা তো আর ১৫ ইঞ্চির স্ক্রিনের দুনিয়ার কেউ না, তারা বাস্তবের মানুষ। তারা ব্যস্ত সত্যিকারের পৃথিবীতে বদলে দেবার বিপ্লব নিয়ে। ১৫ ইঞ্চির এরা তো এটাই জানে না কিভাবে সমাজে বদলে যাবার প্রক্রিয়া শুরু হয়। নৃ-বিজ্ঞান জানে না, সমাজবিজ্ঞান জানে না, পদার্থ বিজ্ঞান জানে না, টেকনোলজি জানে না জানে শুধু উইকি আর গুগোল। কারও ১০ বছরের সাধনার ফসলের প্রবন্ধ ১০ মিনিটে পড়ে ফেলা যায় ঠিকই, কিন্তু উপলব্ধি করা যায় না। এদের আসল উদ্দেশ্য কি, আসল লক্ষ্য কি আমি জানি না। জানতে চেয়েও পরিষ্কার কোন জবাব পাচ্ছি না। আমার মন বলছে এটা যথেষ্ট সন্দেহজনক কিছু একটা হবে, দুরে থাকাই ভালো।

আমি এর মধ্যে বেশ ভালই পরিচিত হয়ে উঠেছি। তাই নিয়মিত লিখার চেষ্টাও করছি। কেন যেন তবু এই যুদ্ধ থেকে নিজেকে যতোটা পেরেছি গুটিয়ে নিয়েছি। এখন আমি শুধু অনিয়মিত ভাবে ব্লগে লিখি। নিজে সারাদিন ব্যস্ত থাকি অফিস আর দৈনন্দিন জীবন নিয়ে, এদিকে দেবার মতন সময় নেই। কিন্তু কিছু কিছু সময় তবু জড়িয়ে পরতেই হচ্ছে আমার প্রেমিকার কল্যাণে। শেষ পর্যন্ত মনে হল, নাহ আর না, ইস্তফা দেয়া উচিৎ এই ফালতু যুদ্ধ থেকে, এই যুদ্ধে আসলে কিছুই অর্জন করা যাবে না। প্লান করলাম, যেখান থেকে শুরু, সেই পেজেই শেষ করব। ঠিক করলাম, আমার কিছুই লিখব না শুধু বলব, আসলে আমাদের লক্ষ্য কি হওয়া উচিৎ। আবারও একটা কবিতার আড়ালে বলে দিলাম যা বলার ছিল, আমি নিজেই বিশাল কিছু মনে না করে আমাদের উচিৎ ভবিষ্যতের জন্য নতুনদের সত্যিকার কিছু শিখানো। যুদ্ধে জেতা খুব সোজা, কিন্তু এমন প্রজন্ম তৈরি করা কঠিন যা টিকে থাকতে পারে। এই কবিতার ভাষা বোঝার মত উপলব্ধি ঐ রণক্ষেত্রে কার ছিল জানি না, কিন্তু কবিতার ভাষায় ঐ পদত্যাগ পত্রটি জমা দিয়ে আমি আমার সৈনিক জীবন থেকে স্বেচ্ছা অবসরে চলে এলাম।

যুদ্ধ থেকে আসার পর বুঝতে পেলাম, জীবনের একটা অংশ আমি ঝেড়ে ফেলেছি, কিন্তু যে অংশটা হারিয়ে গেছে, বদলে গেছে, সেটা ফিরে পেতে আমাকে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। ১৫ ইঞ্চির বাইরের দুনিয়ায় শুরু করতে হবে নতুন সংগ্রাম। কিন্তু আমার ১৫ ইঞ্চির বাইরের দুনিয়ায় তখন পুরো পৃথিবীকে নাড়িয়ে দেবার মত শক্তিশালী ঝড় চলছে। আমি, আমার প্রেমিকা দুজনই ব্যস্ত হয়ে পরলাম সারভাইভালে...

মহান হবার ফর্মুলা আবিষ্কারের গল্প... প্রথম পর্ব: নতুন পৃথিবী

 প্রথম পর্ব: নতুন পৃথিবী


আমার দিন-কাল ভালই কাটছিল। দুপুর পর্যন্ত ক্লাস, বিকেল পর্যন্ত অফিস, সন্ধ্যা পর্যন্ত ডেটিং, রাত পর্যন্ত আড্ডা আর মাঝ-রাত পর্যন্ত মুঠোফোনে প্রেমালাপ। পৃথিবীর সকল সমস্যা এবং তার সমাধান, এই ছকের মধ্যেই বেধে ফেলা যেত। ফোনে প্রেমালাপ আর কত সময়ই করা যায়! ভালবাসি... খুব ভালবাসি... এই প্রকার আলাপচারীতার দৈর্ঘ্য কখনোই ৩০ মিনিট ছাড়িয়ে যায় না। বাকিটা সময় দৈনন্দিন হাড়ি-পাতিলের সংঘর্ষের শব্দাবলীই তখন হয়ে ওঠে প্রেম!
হাড়ি-কড়াইয়ের এই টুংটাং শব্দের মাঝেই শুনতে পেলাম, আমার প্রেমিকা নাকি ব্লগ পড়া ধরেছে। যাই হোক, এটাকে কখনোই আমার সেই ব্যক্তিগত রুটিনের সাথে সাংঘর্ষিক মনে হয় নি, তাই এটা নিয়ে ভাবার কথাও ভাবতে হয়নি কখনও। তবুও প্রেমিকার কাছে ক্রেডিট নেবার লোভটা ছাড়ার মত মহামানবীয় গুন আমার নেই। ফলাফল, প্রেমিকার বিস্ময় মাখা সোৎসাহের উক্তি -
" আয়হায়!!!! তুমি ব্লগ লিখ!!!!!!!!!! দাও তো লিংকটা দাও তো...."
" এহ! হে! তোমার তো ম্যাক্সিমামই ইংলিশ ...."
" ব্লগ গুলাতে কেউ ইংলিশ লেখা পড়ে না..... "
" তুমি তো ভালোই লিখ, বাংলায় লিখ না.... "
" ব্লগে একটা একাউন্ট খুল না...."
" দরকার হলে আমি ট্রান্সলেট করে দিলাম....."
" একটা লিংক দিচ্ছি, পড়, বল কেমন লাগে...."
" ঐ লিখাটা কেমন?..... "
ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি......
আর এভাবেই বাংলা ব্লগের জগতে আমার পদার্পণ। কিন্তু এতেও আমার রুটিন বদলায় না।
তো আমার এমন নিরুপদ্রব জীবনে হুট করে আগমন এক বড় ভাইয়ের। সে নাকি আমার ভার্সিটির বড় ভাই! তাও আবার আমারই ডিপার্টমেন্ট!!!! ৯৮ হতে ২০০৭, প্রায় সবাইকেই চিনি। যাদের একটু নাম আছে তাদের তো চিনিই। ২০১১র মাঝামাঝি এসে যদি হুট করে নতুনভাবে কোন নাম করা বড় ভাইকে চেনা লাগে তবে অহমে একটু আঘাত লাগে বৈকি। আর তাও যদি পরিচয় পর্যন্তই হত...
" ভাইয়া কি লিখেছে দেখেছ?..."
" ভাইয়ার ঐ পোস্টটা না খুব ভাল হয়েছে..."
" জানো, ভাইয়াকে না কল্লা নামানোর হুমকি দিয়েছে ঐ পোস্টে..."
" ভাইয়া না নতুন একটা নোট শেয়ার দিয়েছে... হুজুরদের পুরা বাঁশ দিয়েছে..."
" ঐদিন ভাইয়ার সাথে চ্যাট করলাম...."
" জানো, ভাইয়ারা না নতুন একটা পেজ খুলেছে, ভাইয়ার পেজ না, ফ্রেন্ডের, কিন্তু ভাইয়া সাপোর্ট দিয়েছে, আর ভাইয়া সাপোর্ট দিলে সেই পেজের কি হয় জানোই তো..."
... ... ... ... ... ...
" এই তুমি তো ঐ পেজে লিখতে পার, লিখ না কেন? আমাদের অনেক সাপোর্ট দরকার, যত বেশি মানুষ লিখে ততই লাভ...."
" এই লিখ না... ঐ তোমাকে কি বলছি বুঝছ? লিখ...."
এইভাবে ভাইয়া আমার অনলাইন জীবনে শক্ত খুঁটি গেড়ে বসে গেল, যা উপড়ে তোলা সংগত কারণেই সম্ভব না। আর প্রেমিকার মন রক্ষার্থে, সকলেরই জানা টক অব দা টাউন কথা গুলাই বারবার ভাইয়ার আঙ্গুল-নিঃসৃত পোস্ট থেকে আবার পড়া লাগছে, মতামত দিতে হচ্ছে, লাইক দিতে হচ্ছে, কমেন্ট করতে হচ্ছে... নিয়ম করে, দু'বেলা। মহা বিরক্তিকর ব্যাপার...
ভাইয়ার সাঙ্গোপাঙ্গ, সহযাত্রীও কম নয়। তারা সকলেই ঘরে বসে, ১৫" স্ক্রিনে আটক অনলাইন জগতে বিপ্লব ঘটাতে চান, সমাজ বদলে দিতে চান, পারলে পৃথিবীও বদলে দেন। কর্ত্রীর ইচ্ছায় কর্ম, ইহাই প্রেমিকের ধর্ম। তাই আমিও যোগ দিতে বাধ্য হই এই অস্তিত্ব-বিহীন সংগ্রামে।
প্রথমে বিরক্তিকর লাগলেও পরে একসময় নিজের চেনা জানা গণ্ডির বাইরে গিয়ে প্রেমিকার মতই ভাবতে শুরু করলাম। "তাও তো ওরা কিছু একটা করছে, আমি নিজের অবাঞ্ছিত রোম না উপরে, ওদের সমর্থন দিলেও তো পারি!!!" এভাবে ভাবতে শুরু করার সাথে সাথে ১৫ ইঞ্চির এই রঙ্গমঞ্চটা বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠল। এই মঞ্চের সবখানেই কেমন একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। আমিও তাদের একজন ভাবতে ভালোই লাগছিল। প্রেমিক-প্রেমিকা দুইজন একসাথে পোস্ট পড়ি, লাইক দেই, কমেন্ট করি, আলোচনা করি... ভালোই লাগে।
এই ফাঁকে যে আমাদের প্রেমময় জীবনটাও একটু একটু বদলে যাচ্ছে সেটা আর খেয়াল করে দেখিনি...