Monday, September 26, 2011

আমি যখন অভিভাবক (প্রথম আভিজ্ঞতা)

কাউকে সঙ্গে করে পরীক্ষার হলে নিয়ে যাবার অভিজ্ঞতা আমার অনেক বিচিত্র। প্রথমবার আমি বিসিএস এর ভাইভা পরীক্ষা দিতে নিয়ে গেছি আমার বড় বোনকে !! এমবিবিএস পরীক্ষা পাশ করার পরও একজন কেন একা একা পরীক্ষা দিতে যেতে পারে না এবং কেন ছোট একজনকে গার্ডিয়ান হিসেবে নিয়ে যেতে হয় সেটা আমার মোটা মাথায় একটুও ঢুকেনি।

যাই হোক, নিয়ে যাবার পর দেখি সব বুড়ো বুড়ো লোকজন। কারও সাথে কথা বলার সুযোগ নেই। আর যারা কথা বলতে আসে, তারা শুরুই করে "খুকি তুমি কোন ক্লাসে পড়" দিয়ে। বোরড হতে হতে যখন মনে হচ্ছিল মারা যাব তখন আমি ক্যান্টিন-এ গিয়ে বসলাম। নামেই ক্যান্টিন, আমি আমার এই জীবনে এতো নোংরা , আউট-অব-অর্ডার ক্যান্টিন আর দেখিনি।

একঘন্টা বসে থাকার পর না পারতে একটা রোল অর্ডার দিলাম। রোল  দিয়ে গেল এবং সাথে এক গ্লাস পানি ফ্রি, যেটাকিনা আমারি সামনে একটা ট্যাপ থেকে ভরে দিলো। রোল-এ দু'-একটা কামড় দিয়ে বুঝলাম, খেতে পারব না, তাই গ্লাস-এর পানিতে হাত ডুবিয়ে হাতটা ধুয়ে টিস্যু দিয়ে মুছে আবার বসে আছি।

এরমধ্যে একটা কাপল ভাইভা পরীক্ষা সেষ করে বের হল আর আমার সামনের সিটে ধপ করে বসে পরলো। ভঙ্গীটা স্পষ্ট... এইসব বাচ্চা-কাচ্চাদের তারা মানুষ বলেই গন্য করে না। আর এর পরই ছেলেটা হুট করে গ্লাসটা তুলে নিয়ে ঢক ঢক করে পানি খাওয়া শুরু করলো।  আমি প্রথমে নিষেধ করার চেষ্টা করলেও পরে ভাবলাম খেয়েই যখন ফেলেছে তখন থাক না। আর তাছাড়া মনে হচ্ছে পরীক্ষা দিয়ে ভীষন ক্লান্ত।

ছেলেটা আমার সামনে বসে আমার হাতধোয়া পানি পুরোটা খেলো। এরপর আর কি বলবো। আমি হাসতে হাসতে বিষম খাচ্ছিলাম। কারনটা না জেনেই মেয়েটা কিছুক্ষন চোখ দিয়ে আমাকে ভষ্ম করার চেষ্টা চালালো, এরপর ব্যর্থ হয়ে পোলাপান কি বদমাস এমন একটা মুখভঙ্গি করে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে উঠে পালালো।

Wednesday, September 21, 2011

জেনারেশন গ্যাপ



জেনারেশন এ পরিবর্তন আসে অবশ্যম্ভাবী হয়ে। এর কোন ব্যতিক্রম নাই। কেউ চাক বা না চাক এই প্রক্রিয়া চলবেই। ভাল লাগুক বা মন্দ লাগুক কেউ সময় কে থামাতে পারবে না। এর মধ্যে বিতর্ক এসে যায় ভাল পরিবর্তন আর মূল্যবোধের নিম্নগামীতা নিয়ে। কিন্তু আমি সেসব নিয়েও কথা বলছি না। আমি বলছি কারণ যুগে যুগে সব মানুষের অপ্ত বাক্য ‘দুনিয়াটা রসাতলে গেল’।


আমার দাদা আমার দাদী কে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং তার মৃত্যুশোকে সন্ন্যাসী হন। তিনি তখন অবশ্য ছিলেন যুব-সমাজ রসাতলে যাবার অন্যতম উদাহরণ। এখন অবিশ্বাস্য লাগতেই পারে কিন্তু তখন কেউ তাকে ছেড়ে কথা বলেনি। আমার বাবা রবীন্দ্র সঙ্গীত এর ভীষণ ভক্ত ছিল কিন্তু তার সময় এটা ছিল সঙ্গীত এর নামে অশ্লীলতা। আব্বুকেও সিনেমা হলে সিনেমা দেখাতে যাবার জন্য অসংখ্যবার শুনতে হয়েছে যুব-সমাজ রসাতলে গেল। এসব সিনেমা কে এখন আমরা আর্ট পিস এর সম্মান দেই।
এখন সবার গা-জ্বালা করা একটা সর্বনাম হল ডিজুস জেনারেশন বা আধুনিক ইয়ো পোলাপান। সবার মত অনুযায়ী তাদের কোন শেকড়ই নাই এবং এরা অন্ধভাবে পশ্চিমা সভ্যতা অনুকরণ ও অনুসরণ করে। কিন্তু সময় যখন সব বদলায় তখন সময় এর সাথে যুদ্ধ করা; আমি ঠিক কিন্তু আমার পরবর্তী প্রজন্ম বিবেকহীন এটা বলা, হয় ভণ্ডামি অথবা বোকামি। খুব কম সময়ই সম্ভব হয় উল্টা দিকে পা করে হাটা। তাই সহজ ভাবে বলা যেতে পারে যে সব যুগে সব সময় কিছু মানুষ ভীষণ ভাল মানুষ, কিছু মানুষ কোন কারণ ছাড়াই খারাপ।


জেনারেশন এবং জেনারেশন গ্যাপ এর ছায়ার থেকে বের হয়ে আসতে পারলে আমরা দেখতে পাব যে, অনেক ছোট ব্যাপ্তি তে, কে কিভাবে জীবনকে সার্থক করে তুলবে তার প্রক্রিয়া এবং সফলতা প্রত্যেকটি মানুষের জন্যই আলাদা। আর কোন ভাবেই জেনারেশন ডেলিমা থেকে বের হতে না পারলেও নিজেকে সবচে সফল ও সুখী ভাবা সহজ যেহেতু অপসংস্কৃতি আমাকে ছুতে পারেনি কিন্তু নতুন জেনারেশন পুরাই তার খপ্পরে।


সত্য হচ্ছে আমরা যা-ই করি আমাদেরকে হরদমই শুনতে হবে দুনিয়াটা রসাতলে গেল, তাই অবশ্যই আমরাও বলে যাব যে দুনিয়াটা একেবারেই রসাতলে যাচ্ছে